'' পাহাড়ে কয়েক টা দিন ''













'' পাহাড়ে কয়েক টা দিন ''


প্রিল ১৯৭৯ রাঙামাটি রিজার্ভ বাজারের লন্চ ঘাটে গফুর হাজীর লঞ্চে উঠলাম : নিজাম ; লন্চ মালিকের ছেলে , সারেং কে বলে দিলো আমাদের ভালো মত দেখাশুনা করার জন্য ; ০৮:৪৯ এ বেশ জোড়ে ভেপু বাজিয়ে : টিকেট মাস্টারের হুইসেলের সাথে সাথে দড়ি গুলো গুটানো শুরু করল খালাসী মন্টু | রিভার্স গিয়ারে কিছুদূর যেয়ে লঞ্চটা উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সবুজ পাহাহের পাদদেশের উদ্দেশে ... নীল্ পানি আকাশ আর পাহাড়ের প্রতিবিম্ব সবুজ আর নিল মিলে গারো নীল আকার ধারণ করেছে এক অপরুপ দৃশরাজী |
ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে রাঙামাটি শহর .... অনেক স্মৃতি ফেলে চলছি এক নতুন গন্তব্যে - অনুসন্ধিথ্সু মনের এক নতুন খোরাক : জানতে যাচ্ছি : শান্তি বাহিনীর জীবন : আন্দোলন : কারণ : কেন : কেমন করে : কিভাবে ওরা জীবন যাপন করে এবং আমার ভিউ ওরা কি কোনদিন দেখবে ওদের আন্দোলনের শেষ ফসল | 
"এক জনের চোখে যে দুষ্কৃতিকারী
অপরের চোখে সে মুক্তিযোদ্ধা "
এই এক বিশাল কান্ভাসে অভিজ্ঞতার তুলি দিয়ে আকতে চাই :
"শান্তি বাহিনী "... একটা কলম পেন্টিং|
এক বছর যাবত জনি ( নামটা গোপন করলাম ইচ্ছে কোরে... ) কে অনেক তোষামোদ করে রাজি করিয়েছে আমাকে ওর সাথে একবার ওদের শান্তি বাহিনী দের আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য |
শেষমেষ পরীক্ষা শেষ ও আর কয়দিন পর চলে যাবে মিজোরামের আইজল এ প্রেস্বিতারিয়ান ক্রিস্টান চার্চের দ্বারা পরিচালিত হাসপাতালে নার্সিং শেখার জন্য | একই ক্লাসে পড়তে যেয়ে আমরা কেমন করে একদিন যে পরিনত হলাম ভালো বন্ধুত্বে তা আজও আমার অজানা | 
ভীষণ অমিল আমাদের চালচলনে | আমি উচ্ছাস : হাসজ্জল : প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন আর ও গুরু ঘম্ভির - সিরিয়াস - ভীষণ ভাবে স্বল্প কথার মানুষ| খুব ভালো বেহালা বাজায় : কলেজ হোস্টেলে রাতের পর রাত নিরবে শুনেছি ওর বেহালা .... অপূর্ব সুর : বেহালার সুতোর মসৃন ঘসার মূর্ছনা |
আজ চলেছি সেই আমার প্রিয় বন্ধু জনির সাথে এক অগ্গস্থ যাত্রায় ; জানিনা কোনদিন আবার লোকালয়ে ফিরে আসতে পারব কি না. ? 
অনেক অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে লঞ্চটা এসে থামল লংগদু লন্চ ঘটে .... কয়েক ঘন্টা ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে মনের অজান্তে ..
শিহরিত ভয়ে ... রিদয় কাপছে ... উত্সাহ. ও উদ্দীপনা - তারুণ্য - অকুতভয় সেই চিরচারিত মুন্না আজ পদার্পণ করতে যাচ্ছে শত্রু (perceived ) দের আস্তানায় : লংগদু থেকে দুই দিনের হাটার পথ ... তারপর দেখা মিলবে শান্তি বাহিনী কেম্পের I

প্রাকিতিক নির্মলতা, সবুজ ঘন বন , বিশাল বৃক্ষরাজি অলস ক্লান্ত আকাশের মেঘগুলো কেমন যেন অবস্সন্ন ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় ক্লান্ততার ভাড়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে | পেজা তুলোর মত নিক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্তত ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে | ইশ তখণ যদি আই ফোন থাকত !
ঘাট থেকে নেমে বই গুলো ভালো করে গুছিয়ে নিলাম : উঠে এলাম বাজারে কিন্তু আমার নজোর তো আর প্রকিতির এই সুন্দর্জো দেখার লোভ সামলাতে পারছে না ; একি অপরূপ রূপে মা তোমায় .... 


বৃষ্টির একটা সোদা গন্ধ - বাস্পায়িত হেউমিদিতী ভেপসা কেমন ভেজা ভেজা গরম : সৌনা করতে গেলে যেমন লাগে তেমন অনুভুতি | জনি ডাকলো আমায় : লঞ্চে সারেং খুবই আপ্পায়ন করে নিচের কেবিনে ভাত - লইট্টা মাছের শুটকি - আলু ভর্তা সাতে দল দিয়ে খেতে দিযেচিলো মালিকের ছেলে নিজামের বন্ধু তাই | অত্যন্ত নম্রতার সাথে ছিল সে আহার ও আপ্পায়ন |

কাছে যেয়ে দেখি একটা পানের দোকান জাতীয় টং দোকানে চায়ের জোগার : দোকানের মালিক কে পরিচয় করিয়ে দিল আমার সাথে : তন্জন্গা জাতীয় একটা নাম ওই ভদ্রমহদয়ের| খুবই আদর করলো |
বাকি চা পানকারীদের তীর্যক দৃষ্টি : কিন্তু জনি কে দেখে সবে অর্ধ কুর্নিশ দিতে ক্রিতার্থ| বুঝলাম ও অত্র এলাকার কোনো সম্ভ্রাত্ন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি কেই একজন |
সব পুরুষরাই প্রায় পেন্ট শার্ট পরা মেয়েরা সেই অপরূপ হাতে বানানো ড্রেস পরা | 

একেক জনের শারীরিক গঠন ই বলে দেয় হে যে ওরা প্রথ্তহ এই বিরূপ উচু উচু পাহাড় গুলো অতিক্তম করে | যা দেখে আমি নিজে ভাবছিলাম দুই কিভাবে অতগুলো পাহাড় আর উপ্পতকা পারি দিয়ে কেমনে পৌছাব ওদের আস্তানায় |

কি দেখবো - কি ভাবে গ্রহণ করবে ওরা আমাকে : কিন্তু একবারও ভয় পাচ্ছিলাম না যে ওরা আমার ক্ষতি করবে বলে :

আমি কেন জানি মনের অজান্তে জানতাম আমার এই বন্ধুটি ওদের সেই আন্দোলন বা সংগ্রাম বা দুশ্ক্রিতিদলের একজন বিশাল বেক্তিত্ব



লংগদু তে চা আর কয়েক টা কলা খেয়ে জনি বলল চল বন্ধু এখান থেকে আজ রাতে নৌকায় যাব ওই ওই পাড়ের পাহাড়ের ভিতর দিয়ে আমার মাশীদের বাড়িতে। ওখানে আজ রাতে অনেক গুলো মিটিং করব - তুইও শুনতে পারবি আমাদের জুমা ইতিহাস আর আমরা কেন আজ এই কঠিন বাস্তবতার শিকার হেয়েছি, উত্তরে বল্ললাম ''রাজনীতি মাজ্নীতি ওসব আমি এত শত বুঝিনা - ''
আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ছোট্ট নৌকায় উঠ্থে বলল আর বার বার বলতে থাকলো ; মুন্না এখনো সময় আছে - এখনো বললে এই খানকার কারবারী বাড়িতে রাত টা কাটিয়ে কাল সকালে আবার সেই একই নিজাম্মার লঞ্চে যাইতে গই পারবি দে, বললাম, আমি চে গুভারার শিস্য সেই ১৩ -১৪ বছর বয়েস থেকে চে, মাও সে তুং, ফিদেল আর বই পড়তে পড়তে কখন যে ওদের মত একটা এডভেঞ্চার জাতীয় জীবন দেখার খুব সখ সেধে বসেছি নিজের অজান্তে তা আমি নিজেও জানিনা ; তুই আমার এই মনোর বাসনা পূরণ কৈত্তে ন দিবি না বা'জি?
হঠাত মনের অজান্তে , জনি কে জানিনা কেন জানি মনে হলো - ওর চেহারা টা , ওর জিন্স পেন্ট, ওর মুখে থুতনিতে বেশি হলে ২৭০ টা দাড়ির চুল আর চে'র মতো সেই অবিনস্ত গোফের রেখাটা ওকে কেন জানি পুরা ''চে গুভারা '' মনে হচ্ছিল। বললাম তরে এব্বারে চে গুভারা লাগেরদে : হাহাহা করে সেই অল্প কথা বলা জনি হাসি দিয়ে বেশ জোরে শীষ বাব্জিয়ে আমার প্রিয় গানটা গাইতে লাগলো।........''চেলতে চেলতে মেরি ইয়ে গিত ইয়াদ রাখনা, কভি আল বিদা না কহেনা,'' গানটা শিষের আওয়াজে শুনতে শুনতে ছোট কুষা নৌকায় উঠে বসলাম - ৬ থেকে ৭ জনের মত সাইজের কান্ট্রি বোট - যা দিয়ে আমরা কাঠাল তলি থেকে তবল ছড়ি ফেরি পার হতাম - ফিসারী ঘাটের নিকট থেকে , দুই মাঝি একজন যুবতী মেয়ে আর একজন আমাদের বয়সী যুবক ; 
সে এক ভীষণ উনুভুতি - ফটিকের মস্ত সচ্ছ পানি - সবুজ গাছের পাতায় দুপুরের করা রোদের প্রতিফলন , পানিতে পরে বৈঠার আঘাতে পানির নিরবতা ভাঙ্গা ঢেউ এ পাতার বিকরিত সুরজের আলো এক অবিশ্বাসও তৈলচিত্র যেন আকছে প্রতিটি বৈঠার কোপে ; কোলাহল নামক শব্দটা মনে হয় ওদের অভিধানে নাই ; কারণ এই শব্দটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হলো না। 
আস্থে করে জন্য কে জিগ্গেস করলাম কতক্ষণ লাগবে ? বলল এই পাহাড় গুলোর পিছনে ঘন্টা দেড়েক নৌকার পথ I ততক্ষণে ও বলল রাত হয়ে যাবে ; কাপ্তাই হ্রদ তা থেকে আমরা একটা ছোট নদীর মত খালে পরলাম ; ঐ আমলে সাজেক কে কেই চিনিত না ; ও বললো এই নদীটা দিয়ে চললে পূর্ব দিকে উজান বেয়ে তুমি মিজোরামে যেতে পারবা। 
নৌকার পাটাতনে শুয়ে শুয়ে একের একের পর ষ্টার সিগারেট টানছি আর ভাবছিলাম ''জীবনে যারা অনেক দুরে যায় তারা ষ্টার সিগারেট পান করে''- কোন একটা বিল বোর্ডে দেখে ছিলাম - আমিও যাচ্ছি অনেক দুরে ; বহু দূরে। ৩৬০ ডিগ্রী অবলোকন করতে করতে আর জনির গাওয়া গান শুনতে শুনতে কখন যে নৌকাটা ঘাটে এসে গেছে আর কখন যে সব আধারে প্রায় অন্ধকারাচ্ছন হয়ে গেছে ঠিক তা বুজতেই পারিনি ;
ওর গাওয়া মেলোডি গান গুলো শুনতে শুনতে তরী ভিড়িলো তিরে ;
''হুদু
গেলে ধন পুদি
এচ্চে তুই থেদে যদি
হিনি দিদুং নোআ হাদি
আয় আয় আয় তুই আয় যাদি
হুদু গেলে ধন পুদি
এচ্চে তুই থেদে যদি
হিনি দিদুং নোআ হাদি
আয় আয় আয় তুই আয় যাদি
হুদু গেলে ধন পুদি।............
(অর্থটা আজ অনেক দিনের চর্চার অভাবে ভুলে গেছি প্রায় ;
দেবাশীষ রায় [রাজা বাবু]
গানটি গাইত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে )





নদীর পাড় থেকে রাত্রি যাপন করার জন্য যে গ্রাম এ যাব তা প্রায় ১০০০ - ১৫০০ ফুট উচুতে...পিচ্ছিল পথ - অন্ধকার - চতুর্দিকে মিলিয়ন পোকা মাকড়ের আলট্রা ঝিঝি আওয়াজ কান ঝালাপালা - আকাশ ঝরছে অবিরাম ধারায়  ... .
ক্লান্ত - সিক্ত - এপ্রিলের ভেপসা গরমে একটু শীতের ঠান্ডা অনুভূত হলো...
পাহাড়ের সেডেলে ওদের ঘর গুলো : মিটি মিটি আলো জলছে জোনাকির মত : মাচাং ঘর : সেই ছোট বেলা সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জি তে মন্ত্রীদের ঘর গুলো এরকম ছিল : বাল্লা - লাঠি টিলা - সংগ্রাম পুঞ্জিতে অনেক দেখেছি আগে |

বড় ঘর টা আমাদের - বুঝলাম এটা ওর মামা বাড়ি ... ঘরের মানুষ মহিলা বাচ্চারা সব চৈত্র সংক্রান্তি আর বিজু উত্সব নিয়ে বেস্ত : জনি একটা অপরূপা কিউট মেয়ে কে ডেকে ওর বাক্স পেট্রা  গুলো দিল ওদের জন্য উপহার | জগত মোহনী একটা হাসি দিয়ে গিফট গুলো নিয়ে গেলো স্বল্প আলোতেও ওর হাসিটা লুকাতে পারল না আমার দৃষ্টি থেকে | অপূর্ব সুন্দরী একটা বালিকা ; আমাদের ঘরটা দেখায়ে দিল | চপচপে ভিজা জুতা গুলো বাইরে খুলে প্রবেশ করলাম : মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি : পরিপাটি টান টান বিছানা : লাল সবুজ চাদর | একটা সিগারেট ধরিয়ে বিছানায় কাত হয়ে চুতুর্দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া : কাঠের দৌর্ঘ প্রস্ত শেলভে বই আর বই আর বই : মুন্নার ঈদ আর এত তারাতারি আসতে পারে তা কখনো ভাবিনি : গহীন জঙ্গলে লাইব্রেরী |

ঘরের দহলিজে ততক্ষণে এসে জড়ো  হলো নয় দশ জন যুবক - জিন্স - টি শার্ট পরিহিত এক দুজন ছাড়া :
ভাবতে লাগলাম এরাই কি ওরা?
ওদের ওরা এগারো জন ? চা - মুড়ি - শুটকি মাছ ড্রাই ফ্রাই মচমচে স্নেকস এর মত কি একটা যেন  খেলাম আর ভাবছি : বের হব কি ? বারান্দা কাম দহলিজে | জনি মনে হয় আমার মনে কথা বাইরে বসেই বুঝে ফেলে ডাকল দোস্ত আস : পরিচয় করিয়ে দেই সবার সাথে |চৌকাঠ এ পা দিয়েই আবছা আলোয় দেখতে পেলাম আমার অতি পরিচিত পরিমল - তপন ও বিকাশ কে : 
চোখ এ যেন ভূত দেখছে ওরা : কিছু বলার আগেই জনি বলল মুন্না আমার অতিথি - আমার বিসস্থ বন্ধু : ওরা আসস্থ হলো সঙ্গে সঙ্গে |
জনির পাশে বসলাম : এগিয়ে দিল ওর হাতের হুক্কাটা আমার দিকে এক টানেই আমি কুপোকাত | কঠীন কড়া তামাক - প্রচন্ড ভাবে কাশতে লাগলাম। 
হিস মাস্টার্স ভয়েজের লোগোর পশুটির মত বসে বসে শুনছিলাম ওদের কথাগুলো : ১২.৫ % এর মত বুঝি বাকিটা আন্দাজ করার চেষ্টা করতে করতে ওদের আলোচনা এগিয়ে যায় বেশ দূর | 
বাঙালিরা কি করছে ওদের উপর : কেমন করে এর সমাধান করা যায় |উপনিবেশ কেমন করে ঠেকানো যায় ; ইত্যাদি |
অধীর আগ্রহে সবাই শুনছে ওর ব্রিফিং | ১৯৭৫ এ একবার আমার এক ইস্কুলের বন্ধু আলা নিয়ে গেয়েছিল জাসদের গণ বাহিনীর মিটিঙে ; বক্তৃতা সারমর্ম সেই একই - শ্রেণী সংগ্রাম - পুজির বিকাশ - সামাজিক তন্ত্র কায়েম করতে হবে মাও  সে তুং - লেনিন সেই বাম তন্ত্র : পার্থক্য হলো এরা অ্যাডভান্সড - ভিশন মেধাবী - শারীরিক সামর্থ অনেক বেশি এবং জাতীয়তাবাদী |
ওরা জনগনের মাঝে মাছের মত মিশে থেকে চোরা গুপ্তা আঘাত হানার মধ্য দিয়ে  উপনিবেশ উত্পাটন করতে চায় - ওদের অধিকার আদায়ে বদ্ধ পরিকর - ৫১০০ বর্গ মাইলের এই ছোট এনক্লেভ স্বাধীন দেশ হিসাবে কত টুকু সাস্টেন করবে এটাও ওরা ভাবছে .... ঘুমাবার ভান করে রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে অর্ধ শায়িত অবস্থায় শুনতে থাকলাম | 
ওদের কথোপকথনে এবং ওদের আতিথেয়তায় আমি বিমুগ্ধ | আমার আসাটা নিছক কৈতোহল বসত : ৭১ এ বয়েসের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকায় আসল গেরিলা যুদ্ধটা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিলো তাই : চে গুভারার বলিভিয়ার ডায়রির পাতা গুলো ভেসে ভেসে উঠছিল মনের স্ক্রিঁণে .... কিউবা থেকে আফ্রিকার এ্যাঙ্গোলা থেকে দক্ষিন আমেরিকার বলিভিয়া নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অগ্রনায়ক চে' তোমায় লাল সালাম.....
we shall over come .... over come oneday......
.... রণ ক্লান্ত সেই দিন হব শান্ত
যবে উতপিরীতের  ক্রন্দন রোল .....ধ্বনিবে না .... খরগ , ক্রিপান ভিম রণ ভূমে রণিবে না ...সেই দিন হব শান্ত .....


গভীর রাত পর্যন্ত চললো ওদের পরিস্থিথি ব্রিফিং ; অর্ধেক বোধগম্য হলো আর বাকি ঝাপসা |
দুই বছর থেকেও অত কিছু বুঝতে পারিনাই আজ যা শুনলাম | আমার বয়স যখন ১- ২ তখন মা বলতেন রাঙামাটি গিয়েছিল আমাকে নিয়ে : চট্টগ্রাম থেকে লঞ্চে | কিন্তু ১৯৭৬ সালে আবার যখন গিয়েছিল তখন উনি বিশ্বাসী করতে পারে নাই রাঙামাটির  পরিবর্তন - কর্ণফুলী নদী সোজা রাঙামাটির পাস দিয়ে নিরবে প্রবাহিত হত : মা ভীষণ প্রকিতি প্রেমিক একজন মানুষ উনি সব সময় বলতো - নদীর পাড়ে সমতল ভ্যালি তে শহর নাকি অপূর্ব সুন্দর ছিল.... 
গরমের সময় পানি কমে গেলে ডিসি হিলের নিচে স্পষ্ট দেখতে পারা যেত পুরানো রাজবাড়ির ভগ্নবাসেশ - অতল হ্রদ এর বিশাল গর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল : অতি অল্প সময়ের নোটিশ দেওয়া হয়ে ছিলো | মানব সৃষ্ঠ বিপদ ; কত পানি প্রবাহিত হত লুসাই পাহাড়ের অববাহিকায় সৃষ্ঠ এই ছোট্ট নদীটাতে ? কেই জানতো না : পানি বিশেষজ্ঞরা মনে হয় ছিল অতীব দারুন অজ্ঞ : 
চৈত্র সংক্রান্তি - এবার সংক্রান্তি ও বিজু কয়  দিন পর পুরো পূর্নিমায় হবে মনে হচ্ছিলো , ঐ পাহারারের সেডেল এর ঘরের কেন্টি লিভার ধরনের পিছনের বারান্দায় দাড়িয়ে ভাবছিলাম : চাদের আলোয় দৃষ্টি যত দূর যায় তত দূর এ দেখলাম. স্বচ্ছ পানি আর পানি ... এ পাহাড়ে আবছা আবছা ঘরের পিছনে ঢালুতে দেখা যাচ্ছে আরো ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ টা ঘর : সমতল মত একটা জায়গায় কিয়াং ঘর : উচু একটা মিনেরেট জাতীয় একটা বাস অথবা কাঠের গম্বুজ এর মত কিছু একটা |
একটা নদী কেমন করে বাধ দিবার তিন চার মাসের মধ্যে প্রায় ৩০০০ বর্গ মাইল জায়গা বিশ থেকে ত্রিশ ফুট গভীর পানি দিয়ে নিম্মজিত করে ফেলল আর আয়ুব খানের গাধা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা এটা জানত না | ভিক্ষুকের বিশ্বাস !
১৯৬১-৬২ সালে তিন লক্ষ মানুষের জীবন - জীবিকা রাত রাতি বিপন্ন করা আর ওই বাধ দিয়ে কয় টাকার বিদ্দুত যে উত্পন্ন করেছিল এর সাথে ওই তিন লক্ষ্য মানুষের স্থাবর ,অস্তাবর জমি , সম্পত্তি ফসল , জীবিকার ক্ষতির কোনো যোগ বিয়োগ কি ওরা অদৌ করেছিল ? 
পাকিস্তানিদের বানানো সমস্যা এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভুমিত্ত রক্ষার চাল্লেঞ্জ ! 
বিষয়টির গভীরতা নিয়ে কতটুকু চিন্তা করা হয়েছিল কিনা তা আমার জানা ছিল না তখন - কিন্তু এটা প্রতীয়মান হলো যে ওরা এখনো সেই লেগাসী দুঃক্ষ টার কলেত্টারাল (collateral ) ডেমেজ এর কান্সার এর ক্ষত এখনো বহন করছে অতি কষ্টে | তার উপর অল্প জায়গায় হাজার হাজার নতুন উপনিবেশ ওদের জন্য কঠিন অগ্নিপরীক্ষা বলে ধারণা হলো : কি কোনো প্রকার আলোচনা বা সেমিনার  হয়েছিল কি ? indegenous population এর কি কোনো প্রকার সহমত নেওয়া হয়ে ছিল কি ?




কেন্টি লিভার বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কতসময় যে কাটিয়ে দিলাম অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে ....
সিগারেট এর আলোতে ঘড়িতে সময় দেখে চমকে গেলাম ... 
ঘুমাতে যাওয়ার আগে পূর্বাকাশে বিশাল এক আগুনের গোলা মেঘ আর দূর পাহাড়ের চুড়ার  গাছের ফাক দিয়ে উকি দিয়ে বের হতে দেখে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে ঐ সুরজো উদয় অবলোকন করলাম এই জীবনে প্রথম - লজ্জাবতী ঘুমন্ত বন কে .....আলো দিয়ে বেআব্রু করছে যেন পলকে পলকে... রাতের চন্দ্র শরমিন্দা হয়ে লুকাবার জন্য যেন ভীষণ তাড়া - মেঘের আর পাহাড়ের চূড়ার বৃক্ষরাজী মগডালের পর্দায় বিকৃত আলোর প্রতিফলন সেকেন্ড এর ভিতর কর্ণফুলির পানিতে তৈরী করছে লাল আর সোনালী মরিচিকা এই আছে এই নেই | নিজের অজান্তে রাত ভোর হয়ে সকলের অগোচরে দিবসে পরিনিত হলো আমার চোখের সম্মুখে |
মনের অজান্তে কেন জানি উপলব্ধি করলাম : এই সুরজো, আকাশ , পাহাড় আর পাহাড়ের চূড়া ও বিশাল সবুজ বৃক্ষরাজি আমার না |
আমি কেমন জানি এই জায়গায় অতিথি : এটা  আমার শাসত অপরুপা বাংলা নয় | আমার বাংলার গন্ধ এটা নয় | আমার সমতল পটভূমি এটা নয় | আমার গ্রামে সকালে লাঙ্গল কাধে নিয়ে এখানে কেউ যাচ্ছে না | গরুর ঘরে ঘোমটা পরা শাড়ির  আচল এর  শেষংশ কামড় দিয়ে গরু কে গামলায় বিচুলী আর সর্ষের ঘানি মিশিয়ে দিচ্ছে না | না শুনতে পেলাম দুরে নিশ্সব্ডতা ভেঙ্গে .... আস সালাতু খায়রউম মিনান নার ...|
আমি এবং আমার পদচারণা নেহায়েত এক ভিনদেশী আগন্তক ব্যতীত আর কিছুই নয় : এই পরিবেশ - এই মাটি - এই ভূমি - এই নদী - হ্রদ আমার নয় ....... এ আমার শোনার বাংলা নয় ; আমার তৈল এদের পানিতে দ্রবণীয় নয় :

সারাদিন ঘুমানোর পর সন্ধায় হলো যাত্রা শুরু...... চাদের আলোতে নৌকা দিয়ে পারি দিলাম লেক .... পাহাড়ের পাদদেশে শুরু হলো চাদ টাকে পিছনে ফেলে.... 
আমি আর ওরা পাচ জন : নিরবে হাটা | কোনো প্রকার ভয় নেই ওদের ; আনসার - বিডিআর অথবা আর্মীর | সিগারেট শুধু টানা যাবে না | 
সমতল শেষ - লেক থেকে অনেক ভিতরে ততক্ষণে প্রবেশ করে ফেলেছি আমরা : দুইটা বিরতি নিয়ে একটানা প্রায় সাত ঘন্টা হাটতে হলো : যাত্রা বিরতি রাতের শেষ প্রহরের জন্য | আমি সব সময়ই একটু আয়েশী প্রকিতির এত কষ্টের হাটা আমার জন্য খুব কষ্টের অনুভূত হলো : জনি ভীষণ যত্নশীল - অভিভূত ওদের কমল আচরণে | ঘুম আসলোনা কিছুতেই শিকল ধুম্র পানে (chain smoking) করতে করতে ক্ষুধার্থ হয়ে পড়লাম |
ঘড়িতে পানি ঢুকে সব ঘোলাটে সময় বুঝার অবকাশ নাই : 
পানি আর নরম আদ্র টোস্ট বিস্কুট ই নাস্তা : 
গভীর জঙ্গল : ভয়ার্ত : এই এই ঠান্ডা আবার ভেপসা গরম সাথে বৃষ্টি অঝরে ঝরছে 
তিন বার বিরতি নিয়ে জন্য বললো ঐ যে পাহাড়  দেখছিস ওটা পার হলেই ইন্ডিয়ান মিজোরাম : কি একটা পাবলাখালী  অথবা  পাবনা জঙ্গল এ আমরা | 
বললাম তুই যখন মিজোরাম পড়তে যাবি - তখন আমি পারলে আসব ভিসা নিয়ে : আগরতলা যাওয়ার খুব ইচ্ছা আছে : হাসলো আমার দিকে চেয়ে চেয়ে | আমিও এক চিলতে  ক্লান্ত হাসি উপহার দিলাম পারত পক্ষে |
কোনো জনমানবের চিহ্ন  নাই কেবল আমরা কয়জন ছাড়া ~
হঠাত মনে হলো একটা কেমন যেন পথে প্রবেশ করলাম : বাস গুলো কাটা : বেশ হঠাথ কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ প্রতিধনিত হতে থাকলো চুতুর্দিকে : একো ধ্বনি |
ঢালুতে নামার আগেই একটা ছোট গলিতে দাড়িয়ে আছে দুই জন শান্তি বাহিনী হাতে তাক করা রাইফেল : জগত বিখ্যাত এ কে ৪৭ ( তখন এগুলোকে চাইনিস রাইফেল হিসাবেই জানতাম )
পুরা ড্রেস পড়া ইন্ডিয়ান আর্মির ৭১ জাতীয় সবুজ ড্রেস : জঙ্গল বুট , সবুজ ফেল্ট ক্যাপ : একটু বিচলিত হলাম ; কি জানি কি হয় - দেখতে বীভত্স প্রকিতির : তবল ছড়ি - এলাকার গুন্ডা পান্ডা জাতীয় পোলাপান মনে হলো : যাদেরকে সচরাচর এড়িয়ে চলতাম : ওদের মতই মন হলো | 
অনেক trepidation এর পর এই সেন্ট্রি দের পছন্দ হলো না | এই জাতীয় লোকজনদের সাথে আমার সকল সময় কথা কাটাকাটি হয় : একটু মনক্ষুন্ন ~
চলে দেখি সামনে কি !? 
জনি কে দস্তুর মত সেলুট করলো দুজনা : একটু আশ্বস্ত হলাম | জনি ওদের বিরাট কেই এটা কেন জানি আমি জানতাম মনের অজান্তে অবচেতন মনে অনেক আগে থেকেই |
২২ বছর বয়েস্ ৪ বছর ওর ব্রেক অব স্টাডি জানতাম আমি | কলেজের ফোর্থ ইয়ারের এক মেয়ে আসত ওর রুমে : প্রায়ই : তুই তুই সম্পর্ক ছিল ওদের ; লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হত ওদের : প্রকাস্সে ঐ মেয়েটি আরেক জন ছাত্রের গার্লফ্রেন্ড ছিল : 
জিগ্যেস না করেই বুঝে যাওয়া এবং আচ করা আমার একটা দোষ বা গুন যেটাই হউক না : সব সময় ইহা ভিসন ভাবে কাজ করতো : ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় টেলিপাথি বলা যেতে পারে এটাকে | 
প্রায় দশ মিনিট কেমফ্লাজ সেই চোরা পথে হাটার পড় দেখতে পেলাম পাহাড়ের ঢালুতে কয়েক টা ঘর আর কয়েক টা তাবু : বুঝতে আর বাকি থাকলো না | আমি আসে গেছি মঞ্জিলে মাকসুদে |
কেপ্টেন বান্টি ওর নাম : অবিস্শাস্সো : আমার বন্ধু আমার ই দেশের বিপরীতে যুদ্ধরত আরেক বাহিনীর অধিনায়ক !! 
খুব বিষন্ন লাগলো নিজেকে নিজের কাছে : 
ইশ না আসলেই পারতাম : চিন্তা মনের স্ক্রিনে একবার উদিত হয়েও আবার ঐ চিন্তা বিসর্জন দিয়ে : সকল ইন্দ্রিয় সজাগ করে সব ভেবাচেকা খাওয়া বেকুবের মত অবলোকন করতে লাগলাম |
যেন আন্দেজ পর্বতমালায় হারিয়ে যাওয়া উরুগুয়ে ফুটবল দলের সদস্যের মত ঘটনার অবতারনায় কেমন জানি অপ্রকিতষ্থ .....
ভীষণ সুশৃঙ্খল এই কেল্লা ....

কেমফ্লেজ পথ দিয়ে হেটে আসা পথটা হটাত তাকিয়ে দেখি নাই ! কখন যে একটা ছোট সাকো মতন একটা কিছু পার হয়েছিলাম , মনে করতে পারলাম না : হয়ত খুব বেশি ক্লান্তি দায়ী ; আমার জীবনেও এত পথ : দুর্গম গিরি কান্তার .... কোনো দিন হাটি নাই : পায়ে ফোস্কা : ছয় টা আর চারটা ; তিনটা জোক : রক্ত পান করে একেকটা একটা ছোট খাট সরফি কলার মত মোটা হয়ে গেছে |
কিন্তু কিভাবে এলাম এই তিন দিকে গর্ত আর এক দিকে খাড়া ৯০ ডিগ্রী পাহাড়ের খাদ : ঘাড় পুরাপুরি উচু করে দেখতে হয় ওই চূড়া টা কে | বাকি তিন দিক পাহাড়ি গোর্জ : কেম্পের সমতল জায়গা দুই টা ফুটবল মাঠের সমান তারপর কম করে হলেও আট থেকে নয় সত ফুট নিচে নালা , ঝর্না নেমে গেছে কেম্পের এক পাশের সেই উচু পাহাড়ের ভগ্নাগ্শ থেকে | 
ভলকানিক রক এর পাহাড় ; কালো এবং শেওলায় সবুজাভো | তাকাতেই ভয়ে লোম গুলো শিউরে উঠে : একটু ভীতি জাগে মনের  অজান্তে |
বিকট শব্দে ঝরনা ধারা নামছে নিচে : ওখানটায় মাঠের সবচে নিকটতম : বড় গাছ আরা আরি ফেলে ওটা দিয়ে পানি এসে ভরে ফেলছে চৌবাচ্চা জাতীয় একটা গর্ত : অবশিষ্ট পানি নর্দমার মত ড্রেন দিয়ে. ঘর গুলোর দিকে চলে গেছে একে বেঁকে :
তিন পাশের পাহাড় নালার ওপর পারে এবং এক পাসের উচু ঝরনা পাহাড়ের উচু উচু গাছের আর জঙ্গলের ছায়ায় উপর থেকে মাঠের মত এই knoll টাকে কারোর পক্ষে দেখা মোটেও সম্বভ না |
ভিশন ক্লান্ত কিন্তু দারুন ভাবে উত্সাহী সব দেখার জন্য : মধ্য খানের বড় ঘর প্রায় পঞ্চাশ ফুট লম্বা - বারো তের ফুট প্রস্থ স্কুল ঘর জাতীয় বারান্ধা বিরাট : সাহসী কেম্প | তেমন কোনো সেন্ট্রি পোস্ট জাতীয় কিছুই নজরে পড়ল না ~ যদিও আমি একজন সাধারণ ছাত্র কিন্তু যুদ্ধ বিগ্রহ দেখে অনেক নিরাপত্তা জাতীয় জিনিস জানতাম প্লাস বাবার চাকরির বদৌলতে | 
একটু অবাক হলাম ; একটা মানুষ ও ঘুন্নাক্ষরেও আমাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলো না দেখে |
গহীন জঙ্গল ~ নিস্তব্ধ ~ নিথর অবশ প্রহর এটা আমার সুপ্রিয় মজার চায়ের কাপ না | উপলব্ধি করলাম এটা আমার জীবনের জন্য নয় ; বেশ একাকী লাগলো : শহরে  নিয়ন বাতি আর কোলাহল আমি চাই ; এখানে কিছুদিন থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব |
বন্ধু জনি ওরফে বান্টি কেপ্টেন বান্টি খুবই এখন ইম্পর্টেন্ট মানুষ আমার কাছে মনে হলো :
এ দিক ও দিক করছি - জুতা গুলো খুলে ( আরিফ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় পায়ে প্লাস্টার ওর একজোড়া বুট ধার করে ছিলাম ) বসে আছি চা আর চা খেয়ে যাচ্ছি - একটু পর বান্টি আমাকে নিয়ে গেল ওর রুমে : বললো দোস্ত এটা  তোর  ঘর দে. বুইজ্জো না বাজ্জি | বললাম : তোর্ তো বিরাট পোস্ট শালা এত দিন বলিস নি কেন ? এই আমি বাঙালি ( ম অদা বান্গালু : হাসতে হাসতে বললাম ) আসাতে তোর আবার কোনো পফ্লেম হবে না তো ??? 
শুধু একটু মুচকি হাসলো আর বললো : কেনো ? তুই আমার অতিথি | 
আমি হাসতে হাসতে বললাম " অহিংসা পরমো ধর্ম "....
জাস্ট বললো , বেশি প্রশ্ন জিগাইস না ওদের ; আর মেয়েদের লগে নো ফস্টি নস্টি : ও কে ?
বললাম দেখা হলো  নাতো  কেনো রূপসী ললনার  এখনো : বেগগুন কডে গিয়ই ? নো দেখি ?
উত্তরে হাসলাম আর বললাম মাহবুব ( রাঙামাটির এক ফাজিল জাতীয় বড় ভাই - নেতা ছিল ) ভাইয়ের চরিত্র গোলাপ ফুলের মত পবিত্র ; হাসলাম অনেক্ষণ দুজনে ...
আমাকে বিছানা দেখিয়ে বলল এটা তোর্ বেড : আরাম কর ; ঘুমা পারলে- খাওয়া হলে ডাকব নে |......


বেড বিছানা শোবার জায়গা দেখিয়ে বান্টি যাবার আগে আমি বললাম... তোর্ সাথে অনেক কথা আছে : হমম .. কালকে সকালে সারাদিন গল্প করব ; আজ রাতে বাইরে যাবো : তুই ঘুমা | ক্লান্ত অনেক : তর চেহারা আব্বারে বডি ( চাটগা ভাষা ) গীয়ে ; আয়না দিয়ে দেখ : 

সন্ধা প্রায় আসন্ন | প্রতেক ঘর থেকে কম করে হলেও ১৫ জন বের হলো মাঠে সবাই লাইনে এ দাড়ানো - ৬০ জনের মত হবে সব মিলিয়ে ১২ - ১৩ জন মহিলা থেকে যুবতী থেকে বালিকা | রাঙামাটিতে বসে আমরা ঘুনাক্ষরেও জানতাম না যে এত বড় একটা ব্যাপক সংগঠন গড়ে উঠেছে অথচ আমরা কিছুই জানিনা : 

সবাই রাক রাক ঢাক ঢাক ভাব | তাইত বলি কেন এত বড় সেনা বাহিনীর  উপস্থিথি  | হাজার হাজার সৈন্য ফিসারী ঘাটের পন্টুন দিয়ে সী ট্রাকে উঠে কামান আর মেশিন গান তাক করে যেতে দেখি গভীর জঙ্গলের দিকে : ভাবতাম কোথায় যায় এরা ? এত কি তাড়াহুড়া : কি এত যুদ্ধের দামামা ? এখন বুঝলাম কেন এত ঢাক ঢোল পিটিয়ে অগ্রযাত্রা  |

কলেজে সারাদিন আর্মির টিকটিকি -  সংকর এর বাসায় ঐ এন এস আই অফিসার এর চামচা গুলো খালি প্রশ্ন করত : ডি এফ আই ( ঐ  নামেই তখন ওরা পরিচিত ছিল ) কেপ্টেন সেলিম( জানিনা এখন জীবত আছে কিনা ; ওটা কি অনার আসল না ছদ্দ নাম জানিনা ) : জাগদল বানানো ছাড়াও  -  কলেজ ছাত্রদের ছাত্রীদের (!) মাঝে বন্ধুত্ব করতে কেন চাইতো এত ?

কিন্তু আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতায় আমি তো কখনো কোনো খারাপ আচরণ দেখি নাই | আর্মি ছিল সর্বদা অতি নম্র : ভদ্র : সহনশীল : আমরা ফুটবল খেলতাম কলেজের পিছনে হোস্টেলের সামন যেটা ছিল আর্মি ব্যারাক : ওরা খুবই সহযোগী ভাবাপন্ন মনে হত : 
তাহলে কেন এরা এতটা বৈরী ? কেন এত নিপীড়িত মনে করে এত ? 

আমাকে বেশ ভাবান্নিত করে তুললো এই প্রশ্ন গুলো | ওদের আচরণ তা কেমন শত্রু শত্রু  : সবাই না | শহরের বাসিন্দারা কসমোপলিটান -  জাতিভেদ নির্বিশেসে সবাই আমরা ছিলাম সবার বন্ধু : প্রিয় বন্ধু | ওই বিদ্বেষ এবং ভেদাভেদ বলে কোনো কিছুই কখনো উপলব্ধি করি নাই : অন্তত আমি করি নাই - বাকিদের কথা বলতে পারব না |

ডক্টর হাসান : আমাদের মাহফুজের বাবা আমাকে একবার একটা বই দিয়েছিল ; হিস্ট্রি অফ হিল্লস অফ চিটাগাং  : একজন ইংরেজ সাহেবের্ লেখা - ঐ  বইটার কথা মনে পড়ল : শুয়ে  শুয়ে ওদের মিলন মেলা দেখছি আর ভাবছিলাম  |

কেমনে শুরু হলো এই সশস্ত্র বিপ্লব? কোথায়ও পড়ে জানতে পাড়ার কোনো  অবকাশ নাই : কেউ কোথায় কোনো নথি পত্র সংরক্ষণ করেছে বলে আমার জানা ছিল না |

দু একটা কবিতা প্রকাশ করে মাকসুদ ভাই নামে পত্রিকার সম্পাদকের সাথে বেশ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম - উনি বলতে চাইতেন কখনো কিন্তু দুই পক্ষের ভয়ে ঝেড়ে কাশতেন তা কখনো |

দু একজন লোকাল বন্ধুদের জিগ্গেস করলে ওরা অতি দার্শনিক উত্তর দিতো ; যার কোনো জোরালো যুক্তি ছিল না - কিন্তু এটা বুঝতে কষ্ট হলো না এদের অনেকই আমাদের উপস্থিথি  টা  গ্রহণ করতে চায়  না; - তার মানে এই না যে ওদের অস্ত্র তুলে নিতে হবে ? 

অস্ত্র তুলে নেওয়ার পিছনে কি ? এটাই জানার অভিপ্রায়  ই  আমার আসার অন্যান্য কারণের অন্যতম কারণ |

পাচ ছয় দলে বিভক্ত হয়ে গেল ওরা -  চক চকে অস্ত্র -  কিভাবে পেল ওরা : ৭১ এ  মুক্তিরা সেই ঐতিহাসিক দ্বিতীয় মহাযুদ্দ্জের ৩০৩ রাইফেল পেলেই আন্নন্দে আত্মহারা হয়ে যেতো : এস এল আর আর জালি জালি স্টেন গান পেলে তো নিজেকে মহান সেনাপতি মনে করত : 

কোথা থেকে কিনে এরা এই সব অথবা কে দিচ্ছে ?

গুলাগুলি এখানে বহন করে আনাও একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ...
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তা মোটেও বুঝতে পারি নাই : হেরিকেন এর আলোতে আমাকে ডাকলো কেউ  : মেয়েলি স্নিগ্ধ আওয়াজ  : ....


ক্লান্তি - অবসন্ন বেথায় কাতর - জোকের কামড়ে রক্তক্ষরণ - ক্ষুদা সব মিলিয়ে কঠিন আমার অবস্থা | কে যেন আমাকে ডাকলো : আরমরা ভেঙ্গে চোখ খুলে দেখি : দরজায় দাড়িয়ে আছে একজন আর আমায় ডাকছে উঠে খাবার জন্য | ওই বৈরী পরিবেশে , ক্লান্ত , কাতর সময় এ ওই দরজার চৌকাঠে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে কে যেন : লম্বা বেশ অন্যদের চেয়ে , হেরিকানের আবছা আলোয় মুখ টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না | বিছানায় উঠে বসলাম : হ্যালো জাতীয় একটা কিছু মনে হয় বলেছিলাম মনে নাই এখন |
ভদ্র মহিলা বললেন আধা ইংলিশ আর আধা সুন্দর বাংলায় : জনি দা বলে গেছেন আপনাকে লুক আফটার করতে , আসুন খেতে হবে এখন | 
একটু অবাক হলাম - ইংরেজি আর স্পষ্ট বাংলা শুনে ; বলেই ফেললাম আপনি তো ভালো বাংলা বলেন : কোনো উত্তর দিল না : বলল গল্প পরে আমি ক্ষুদার্থ - জলদি জলদি | 
আমি সারাজীবন ই একটু অলস এবং কেজুএল টাইপের মানুষ : তারাতারি - চটজলদি - তাড়াহুড়া এইসব কয়েকটা শব্দ আমার অভিধানে কোনো স্থান কখনই ছিল না - আজও নাই বললেই চলে |
উঠতেই হলো বিছানা ছেড়ে পাশের রুমে মাটিতে বসে খেতে হলো আর টুকটাক কথা হলো দু একটা বুজলাম কথোপকথনে খুব একটা আগ্রহী না | একটু মনক্ষুন্ন: | কি দিয়ে যে কি খেলাম কিছুই বলতে পারব না : তবে প্রায় বাঙালি খাওয়া | 
নাম জিগ্গেস করলাম : গুরু ঘম্ভির উত্তর : নাম "লুম্বিনি ": 
কথার ইলাস্টিক তা টেনে বড় করার প্রয়াসে ~ বাহ্ দারুন নামতো - এটার মানে কি ? 
বললো এই গ্রামে বুদ্ধের জন্ম ; লুম্বিনি গ্রামের নাম -
একটু কনফিউজ হয়ে বললাম : গৌতম বুদ্ধ মনে হয় দুইজন ছিল কি ? 
কারণ ছোট বেলায় আমাদের পড়তে হয়েছিল
ওখানে লেখা ছিল ওনার জন্ম কাপিলাশিন্ধু নামক স্থানে তাহলে লুম্বিনি আবার কোথা থেকে আসলো ? 
ব্রেকিং দি আইস ওই খানেই শুরু : মনে মনে বললাম : বুদ্ধ জি তোমায় প্রনাম : তোমার জন্মের গল্প দিয়ে লুম্বিনির বরফ যে গলাতে শুরু করতে পেরেছি তাই আপনাকে অনেক অনেক নমস্কার.... ঘুনাক্ষরেও জানিনা এ বরফ গলা নদী কি অদৌ সাগরে তার নিগৃহীত জলরাশি উজার করে বিলিয়ে দিবে কিনা : 
ছোট বেলা শিখেছিলাম যে খানে দিখিবে ছাই উড়িয়ে দেখো তাই ....!
বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের প্রতি অপর লিঙ্গের মানুষদের এক প্রাকিতিক মোহো এবং একে ওপর কে জয় করার অভিপ্রায় স্বর্গীয় এক আশির্বাদ বৈ আর কিছুই না মনে হয় - সৃষ্টির এ যেন এক অমোঘ অভিপ্রায় | আমিও এবং লুম্বিনীয় মনে হয় এই জামিতিক ফর্মুলার বাইরে কেউ না | ভাবলাম ইশ জেমিতি কি কখনো বায়োলজি হোতে পারে না | 
অসংলগ্ন পৈশাচিক ভাবনা পরিত্যাগ কর বত্স :
বললাম : তুমি কি এখানে থাক ? হা উত্তরে বললো : 
স্ট্রেঞ্জ : আমি বললাম
এত ভালো ইংলিশ বল কেমন করে .. প্রশ্ন করলাম 
লুম্বিনি অর অবিন্স্থতো সোজা সোজা ঘন কালো চুলের ফ্রিন্জ টা মোলায়েম একটা হাত দিয়ে সরিয়ে উত্তরে বললো - আমি ক্রিস্টান মিসনেরি দের ইস্কুলে ১৩ বছর পড়াশুনা করেছি - মাদার অমুক আর ফাদার জন এর মিসন ইস্কুলে - ?
সুযোগ মতো একই সমান্তরালে অবস্থান করার সেই লোভ টা সামলাতে পারলাম না : বল্লাম যুদ্ধের আগে আমিও মিসন ইস্কুলে পড়েছি ২ বছর - ব্রাম্মন বাড়িয়া তে - মিসেস মেলপাস জাতীয় নামের আমার টিচার ছিলেন : বল্লাম ওরে বাবা ভীষণ কড়া নিয়ম কানুন : 
শুনে ও একটু আগ্রহী হলো মনে হয় ...|
কোথায় এই ইস্কুল ? 
বললো কেন - পাবলা খালি আর নিম সিড়ি তে |
ওটা কোথায় !?
অনেক একটা বড় বর্ণনা থেকে যা বুজলাম : ঐটা মিজোরাম অথবা এই দুই দেশের মাঝামাঝি কোথাও হবে টবে |
বললাম আমার ছোট বেলা থেকেই মিজোরাম যাওয়ার খুব শখ - প্রসংগত বলে রাখি আমার এক দাদা এক সময় কাম্রুক কামাক্ষা এবং মিজোরামে ব্রিটিশ আমলে পুলিশে চাকরি করেছিলেন - উনি আমাদেঐসব গল্প বলতো - তখন থেকেই আমার ওখানে যাবার ইচ্ছা | 
এখান থেকে তো বেশি দূর না মে হয় তাই না | 
উত্তরে কিছুই বলল না - 
একটু হেসে বললে জনি দা ' কে বল ও তোমাকে নিয়ে যেতে পারবে | 
ভাবলাম যা গহীন এই জঙ্গল : বর্ডার পোস্ট তো এখানে হিলি অথবা দর্শনা বা জকিগঞ্জের boroigram আর করিমগঞ্জের মত না - এই গভীর বনে আর পাহাড়ের ভিতর দিয়ে কোন মানুষ আর প্রাণী কে কখন বর্ডার অতিক্রম করলো তা কোনো বিডিয়ার বা বিএসেফ এর বাবার ও সাধ্য নাই নিয়ন্ত্রণ করার |
প্রায় আমার সমান উচ্চতা লুম্বিনির : বজলুর ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় .... কাঁচের বোতলের তাবানি বেভারেজের কোকের বোতলের মত ওর দেহাবৃতির আকার ও সাইজ - adolescence আর যুবক হবার এই সন্ধিস্থলে এসে এই রকম পরিবেশে এই রকম অপরুপা তম্বি , সুনয়না - বনলতা সেনের মত : জগত মোহিনী সেই হাসি : শান্নিধের উষ্ণতা অতিব মুখেজল আশা প্লাবনের অনুভুতি | তার পর ডেম কেআর একটা আচরণ - করা করা উত্তর - বনরূপার রূপের অতিসজ্জো - সেই হেরিকেনের আধো আধো আলো - আধো অন্ধকার সব মিলিয়ে পরিবেশ টা কেন জানি মনে হলো ভীষণ রোমান্টিক | 
একবারে ভয় উদয় হলো না ! শান্তি বাহিনীর এই বাঘিনীর কাছে অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করলো : ওদের এই জীবন - তথাকথিত সংগ্রাম এবং - কি চায় এরা ? এর কি কোনো রাজনৈতিক সমাধান নাই ? কেন এই হানাহানি ? কেন এতো অনীহা এবং মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃনা ?
কেন জানি সাহসে কুলালো না - কমল ওই ত্বকের ভিতর কেন জানি মনে হলো লুকিয়ে আছে আলট্রা জাতীয়তা বাদ জাতীয় কিছু একটা - তাই এড়িয়ে গেলাম |
বললাম ওকে , আই লাভ নেচার - তুমি আমাকে দেখাবা এই আসে পাশের এলাকাটা : জনি তো খুব ইম্পর্টেন্ট বেস্ত মানুষ : প্লিজ আমাকে একটু দেখায়ে দিও কালকে - পাহাড় - ছরা - বন - শুর্জো অস্ত এবং তোমাদের কালচার - ফকলোর - কুসংস্কার সব অল্প অল্প করে ... প্লিজ দিবে ? 
মাথা আর নথ নেড়ে হা বলল : বললাম আমি খুবই কৃতজ্ঞ থাকবো তোমার কাছে আজীবন |
শুভো রাত্রি বোলে বিদায় নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়তে লাগলাম সাথে নিয়ে আশা একটা আধা ভিজে যাওয়া বই - কীম ...বইটি ..
পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পরলাম জোছনার চাদর মুড়িয়ে ....



ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কোরো প্রভু ... বেশ গোলযোগ ও উচ্চ স্বরের অওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো...জনই আমার পাশের কাঠের পাটাতন ওলা চকি তে ঘুমিয়ে আছে : কখন যে ওরা এসেছে ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি|
কোথায় গিয়েছিল ওরা - কি করে ওরা এই রাতভর - অধীর আগ্রহ নিয়ে উঠে : মনে মনে খুজছিলাম লম্বা মৃগদেহী সাগরের মত নিল ও গভীর চোখের লুম্বিনিকে | যেই ভাবা সেই হাজির আমার প্রাইভেট সেক্রেটারি !!
এক টা আদ্রতার মূর্ছনা বাতাসে : টাটকা বাতাসে সাস গ্রহণ করা যেমন : বলল আমাকে কাল এত গল্প করলাম কিন্তু আমি তোমার নাম পুছ করি নাই : 
উত্তরে বললাম নামটা আমার খুবই আনকমন একটা নাম .." প্রিয়তম "
হঠাথ কোথা থেকে এই নামটা বলে ফেললাম তা নিজেও জানিনা | 
কাষ্ঠকঠীন ভাবে বলল ; ও আচানক জাতীয় নাম অনের (আপ নার )
মনে মনে নিজেকে নিয়ে নিজেই হাসলাম ;
ঘুমের মধ্যে জনি কি জানি বলল ওকে ওদের ভাষায় : আর আমাকে বলল সালা : লটফট চাপাবাজি বন্ধ কর ; 
উত্তরে বললাম : আমি তো মনে করছিলাম তুই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন | গুজবে কান না দিয়ে ঘুমা ~ ইবারে কি দে আরে এক্কানা এলাকাটা দেখাইবার লাই |ও বলল খাওয়া দাওয়া কর তুই আর আমি গল্প করব একটু ঘুমিয়ে নেই |
জো হুকুম জাহাপনা বলে লুম্বিনির লেজে লেযে প্রবেস্ করলাম ওই পাশের ঘরে - চক চকে লেপা ঘরটা পরিষ্কার পরিছন্ন দারুন :
নাস্তা মানে নাস্তা : ভালই লাগলো : ডাল ও চালের কিছুরই জাতীয় একটা স্টু আর মাছের সাথে মিশানো পরিজের মত কিছু একটা এক কাপ ব্লেক টি | পারফেক্ট |
বাইরে তাকিয়ে দেখি চুর্দিকের পাহাড়ের মাঝখানে আমাদের পাহাড় টা যেন একটা টেবল - জাতীয় ফিচার |
প্রকিতি এক বিশাল কারিগর নিজেই নিজেকে রূপ দিয়ে সন্দরজো বাড়ায় নিজের |
তাড়াতাড়ি খেয়ে বের হলাম সব ঘুরে ঘুরে দেখতে ~ সব গুল ঘর আর তাবু মিলিয়ে মনে হলো আশি নব্বই জন লোক থাকে এখানে | বিরাট কেম্প : 
অস্ত্র - গোলা বারুদ দেখার লোভ সংবরণ করতে পারছিলাম না | 
উদাসিনী লুম্বিনি আমার সহচর ~ আমার ছায়াটাকে অনুসরণ করছে খুবই আগ্রহের সাথে | 
রান্নাঘর খুঁজে পাইনা আর দেখতে পেলাম না শৌচাগার এবং বাকী সব কিছু |
বেশ একটু বেক্ষাপা লাগছিল নিজেকে তাই হাটা বন্ধ করে আবার রুমে আসে সিগারেট ধরলাম জীবনে অনেক দুরে যাবার প্রতাশায় |
বুঝলাম এই জংলি বিড়াল গৃহপালিত নাও হতে পারে : কি আশায় বাধিব খেলাঘর বেদনার পাহাড়ে |
জনি ই আমার জিজ্ঞাসার খোড়াক ~ ওকেই জিগ্গেস করে জানব সব | 
কেম্পে আরো অনেক গুলো মহিলা কেডার দেখলাম - কমল কিন্তু কঠিন অবয়ব - সুন্দরী কিন্তু সসস্ত্র - বললাম মনে মনে - বড় প্রেম শুধু কাছেই টানেনা ... দুরেও সড়িয়ে দেয় |
টেবল পাহাড়ের পূর্ব কোনায় চলছে ওদের প্রশিক্ষণ : বুজলাম এই আওয়াজেই আমার ঘুম ভেঙ্গেছে | 
১৫-১৮ জন মেয়ে কাল থেকে আজ বেশি মনে হলো |
সেই ঐতিহাসিক জুডো ও কারাতে শিক্ষা : যুগ যুগ যাবত এটা সকল গেরিলাদের এক শিক্ষনীয় প্রশিক্ষণ | আসলেই কি এই শিক্ষা কোনো কাজে লাগে কি ? 








দুর্দান্ত সে ব্যাপার ইংরেজি এল অক্ষরের মত তিনটি ইস্কুল ঘরের মত ঘর চতুর্থ দিকে তিন টা বড় তেরপালের তাবু বিশাল বড় - ভিতরে দেখা যায় না কিন্তু বুঝতে কোনো অসুবিধা হলো না - এই গুলোতে যে অনায়াসে ১৫-২০ জন ঘুমাতে পারবে।  আমার কাছে অবাক লাগলো- এত ঢাক ঢোল - এত দামামা অথচ এত বড় কেম্প কেন এখনো আইন প্রয়োগকারীরা চোখে দেখে না  ? পরক্ষন্নে ভাবলাম কোন দেশে দাড়িয়ে দেখছি এইগুলো শুধু ওরা আর ওদের ভগবান ই জানে ;

কৌতুহল ভালো কিন্তু বেশী কৌতুহল বিপদের খুবই নিকট আত্তীয়।  এল অক্ষরের ছোট হাতের শেষ অংশের পাশ দিয়ে নেমে গেছে ছোট একটা ঢালু ৮০- ৮৫ ডিগ্রী পথ - নামার কথা চিন্তা করতে যেয়েই আমার যান প্রায় অস্টাগত।  বেশি উচু তে উঠলে আমার কেমন যেন একটা অনুভুতি হত সব সবসময় - সেই আট বছর বয়েসে সিলেটের বড় লেখা তে লাঠি টিলা তে উঠেই প্রথম আমি উচ্চতা জাতীয় ফোবিয়া যে আমার আছে তা বুঝতে পেরেছিলাম।  
এই দুর্গম খাড়া পিচ্ছিল শেওলা যুক্ত ঢালু পথ দিয়ে নামা - আবার লুম্বিনির সামনে নিজেকে এতটা ছোট করা কেমন যেন ইগো তে লাগলো - উপায়ান্তর নে পেয়ে নামতে শুরু করলাম - যা আছে কপালে - ও আমার সামনে আর আমি পশ্চাতে - পশ্চাত অবলোকন করা উচুনিচু অঙ্গ সঞ্চালন বেশ দৃষ্টি মধুর ও যে হতে পারে তা আগে এমন করে উপলব্ধি করিনি কখনো ; ধীর পায়ে নামতে থাকলাম - নিচে পানি - একটা পাহাড়ি নালা - বেশ গর্জন করে ডান দিক থেকে আমাদের বামে প্রবাহিত হচ্ছে - প্রায় ৩০০ ফুট তো হবে কম করে হলেও এতই ঘন জঙ্গল আমাদের মাথার  উপরে ওই ঘন জঙ্গলের  ছাদ ভেদ করে আকাশ দেখায় যায় না।  মাঝা মাঝি মনে হলো আরেক টা ছোট টেবল এর মত পাহাড় রয়েছে বলে মনে হল উপর থেকে।  সাবধানে এক পা এক পা করে নেমে আসলাম অবলীলায় একসময় - ভেপসা গরমে ঘেমে গেছি ইতোমধ্যে চপ চপ করছে আমার সার্ট - লুম্বিনি বলল তুমি না থাকলে আমার নিচ পর্যন্ত নামতে বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মিনিট লাগে - আর তুমি থাকতে অর্ধেক পথ নামতেই লেগে গেছে প্রায় ৭ - ৮ মিনিট - বললাম বাবা আমি তো তোমার মত পাহাড়ের মানুষ না।  আমাদের ওখানে কোনো পাহাড় দুই তিন বছরেও দেখতে হয় উঠা আর নামা তো দুরের কথা। 

বুঝলাম   লুম্বিনি আসতে আসতে এমিবিয়ার সেই খোলস থেকে নিজেকে নিগ্রহন করে বেরিয়ে আসছে।  ওর কথোপকথন ক্রমানয়ে নমনীয় এবং স্নেহশীল হয়ে যাচ্ছে।  টুকটাক প্রশ্ন ও বেশ করছে আমাকে।  ও খুবই অবাক যে এখানে এই জঙ্গলে কেই শখ করে আসতে পারে, সন্দেহ করছে আমাকে তাও বুঝার কোনো অবকাশ নেই।  কিন্তু, আমি বেশ আস্চজ্য যে ওই কেম্পের কেই আমি আমাকে কোনো প্রকার অযাচিত প্রশ্ন করছে না বা কোনো কত্তক্তি ও করছে না - এটা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল।  কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না।  ওকে বললাম - আমি এই কেম্পে থাকলে এত দিনে এই ঢালু পথ টা মাটি কেটে কেটে অনেক সহজ করে ফেলতাম আর এই পথের পাশে হাত দিয়ে ধরার জন্য রেলিং জাতীয় কাঠ অথবা বাশ লাগিয়ে দিতাম সহজে উঠা নামা করার জন্য - সেই ছরা পর্যন্ত।  
মধ্য খানের টেবল এ নেমে আমার চক ছানাবড়া  - একটা জলজান্ত গুহা - এই জীবনে প্রথম গুহা দেখলাম - অর্ধেক গুহার বাইরের জায়গা তে রান্না ঘর  বেশ বড় একটা একচালা ঘর আর গুহাটা ওদের  গুদাম ঘর - গাছের গুরি আরে ডালপালা শুকনো এবং সবুজ দিয়ে দরজা জাতীয় একটা প্রবেশ পথ - পাহাড়ের খাদের থেকে পাচ থেকে ছয় ফুট দুরেই গুহার মুখ - খাদটা বেশি হলে ১২ - ১৫ ফুট প্রস্থে আর তার ওপর পাড়ে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে আছে এক বিশাল পাহাড় একে বারে ৯৯ ডিগ্রী খাড়া ঘন বন আর উচ্চতায় প্রায় আরো দুই থেকে তিনস ফুট উচু প্রধান কেম্প টেবল  পাহাড়ের চেয়ে। আক্কেলমন্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি - বুঝার বাকি রইলো না ঐ গুপ্তস্তানে কি থাকতে পারে !

আমি নেমে একেবারে ক্লান্ত হয়ে কুক হাওউসের সামনে বসে পরলাম - লুম্বিনি অনেক কথা বলল আমাকে পরিচয় করয়ে দিল ওখানকার দু এক জনের সাথে ; অনুসন্ধিত্স: মন এ এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে এক দের হাজার প্রশ্ন ; এই সব আমি কি দেখছি ?  


এগুলো তো এডভেঞ্চার জাতীয় বইতে শোভা পায় - বাস্তবে কেমন যেন অব্বিশ্সো মনে হলো আমার কাছে ; ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ শুরু করি নাই - ওরা আমাদের উপর প্রথম হামলা শুরু করেছে আর আমরা অপমান সহ্য না করতে পেরে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম ওদের কে চিরতরে বিদায় করার জন্য - কিন্তু এখানে তো পুরা ব্যাপার তা বিপরীত - কেই তো ওদের কে প্রথমে হত্যা বা উচ্ছেদ করে নাই - কেই ওদের স্বাধিকার কেড়ে নেই নি বা নিতে চাই নি - তা হলে কেন এই সব প্রস্তুতি ? একটু হোচট খেয়ে থমকে গেলাম।  এত দেখি পুরাদমে গেরিলা যুদ্ধের অবতারণা।  অথচ আমরা যারা সাধারণ মানুষ আমাদের কে কেই কোনো দিন কোনো প্রকার হুশিয়ারী বা কোনো প্রকার ভুমিকা ও বলে নাই ; কেন ? জনগনের জনমতের কি কোনো প্রয়োজন নেই ? 

শুধু শুধু মনে হত  কেমন যেন একটা দক্ষিন আফ্রিকার মত বর্ণবাদী APARTHEID  এর মত একটা বিভাজন করার চেষ্টা  করা হচ্ছে - ওখানে সব সময় ই মনে হত একটা সুক্ষ তীক্ষ্ণ সরল রেখা বিভক্তির রেখা হিসেবে কাজ করত।  


ওদের সরঞ্জাম, ওদের অভিপ্রায়। ওদের চাহিদা। ওদের চিন্তা - চেতনা এইসব কিছুই আমার (আমাদের) গভীর ভাবে জানা ছিল না - এবং ১০০ সত ভাগ সিওর আমার মত ১৮- ১৯ বত্সরের কোনো যুবকই জানত না।  আঠার বছর বয়েসে ভোট এর অধিকার দেওয়া হয়, দেশ প্রতিরক্ষা তে নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু দেশের এক দশমাংশ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় এটা কেউ কোনো দিন আমাদের অবহিত করে নাই বা উনারা এতই ব্যাস্ত ছিলেন কাপ্তাই লেকে আনন্দ ভ্রমন করতে যেয়ে আর বেম্বো নৃত্য  দেখতে গিয়ে - বেমালুম মনেই ছিল না আমাদের মত সাধারণ জনগণ- ছাত্র- আবাল- বৃধা বনিতাদেরও জানার অধিকার আছে ! সব জানা থাকলে হয়ত তখন ইনফর্ম সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। ....







গুহার মুখে রান্নাঘরের দরজায় জল্চকিতে বসে বসে কিছুক্ষণ গল্প আর এক এক কাপ ব্লেক টি খেলাম - লুম্বিনি বলল চল নিচে যেয়ে পানি দেখি আসি আর ওখানে বসে বসে অনেক কথা বলা যাবে - চোখে একটা কেমন যেন  উস্ষ্ণ ইশারা - আমি আবার এই সব একটু কমই বুঝতে চেষ্টা করতাম। 

আমি প্রশ্ন করলাম ওকে - তোমাদের এই বিচ্ছিন - বেবাগী জীবন নিয়ে আমার মনে কয়েক হাজার প্রশ্ন জাগছে - তুমি আবার আমাকে কোনো গুপ্তচর মনে টুপ্তচর করছ না তো ? প্লিজ, আমার ভয় লাগে কি জিগ্গেস করতে আবার কি জিগ্গেস করে বিপদে না পরি ? উত্তরে বলল - জনি দা' কেপ্টেন বান্টি উনি আমাদের একজন অনেক উচুমানের নেতা - উনি তোমার সম্পর্কে আমাদের সব বলেছে কাল রাতে - উনি তোমার খুব প্রিয় বন্ধু এবং উনি সবাইকে বলে দিয়েছেন তোমাকে যেন অবিশ্বাস না করে - একটু সারপ্রাইজ হলাম কথাটা  শুনে ; আসার পর থেকে জনি আমার কাছ থেকে একটু দুরে দুরে থাকছিল বলে আমি একট অবাক হয়েছিলাম - কিন্ত লুম্বিনির কথায় ওর  সব রাগ কেমন যেন চলে গেল নিমিষে ;  ও বলল চল নিচে - ওখানে সব প্রশ্ন কর - জানা থাকলে উত্তর দিব আর বেশি জানতে চেয় না আমি নিজেও এখানে নতুন ; অনেক ইতিহাস অন্য সময় বলব। 


আবার সেই একই ঢালু খাড়া পথে নিচে নামা - আমার জন্য খুব মজার কোনো ব্যাপার না ; বেলেন্স করা আর না পিছলে নিচে নামাটা আমি তখনও ভালো ভাবে রপ্ত করতে পারি নাই - বায়োলজির থেকে একবার গিয়েছিলাম মানিক ছড়ি হিলে বোটানি  বিদ্যার নমুনা (specimen) সংগ্রহ করতে আমরা পুরা ক্লাস - সারাদিন আমি আর কয়জন নমুনা না সংগ্রহ করে লুকিয়ে লুকিয়ে আড্ডা মেরে সময় কাটিয়েছিলাম কারণ ওই মানিক ছড়ির পাহাড় গুলো ছিল সিরিয়াসলি পিচ্ছিল আর ৭০- ৭৫ ডিগ্রী স্লোপ পা পিছলে কয়েক বার পরার পড় - আর ইচ্ছে করে নাই নমুনা ( স্পেচ্সিমেন) কালেক্ট করার ; নিচে নামার সময় ভাবলাম আগে জানলে নিচে নামার টেকনিক তা তখন ওদের থেকে  শিখে নিয়ে পারলে আজ এত কষ্ট আর ভয় লাগত না। 


নিচে নামতে নামতে ভাবছিলাম - এই অজ পাড়াগায়ের - ঘন জঙ্গলের বাসিন্দা এই মেয়ে টা কেমন করে এত  পরিপাটি - চুল গুলো বব কাটা - ব্লু ডেনিম জিন্স - পায়ে কেডস - ফুল স্লিভ টি শার্ট এর মত টপ - বেশ পরিছন্ন - কেমনে সম্ভব ? তখনও আমাদের মেয়েরা সেলোয়ার আর কামিজের গন্ডি থেকে কেবল শাড়ি পড়ার অভ্যেশ রপ্ত করছে অথচ এরা  অনেক অ্যাডভান্স ; আবার এরা নাকি জাতি না ''উপ ''?  একটু খটকা লাগলো - সাবলীল ভাবে আমার তিন চার মিনিট আগেই ও নেমে গেল তরতরিয়ে ; আমি আস্থে আস্তে শম্বুক গতিতে নামিলাম বীর  দর্পে !


পানি - ভাত আর মাছ এই তিনে আমি বাঙালি - পানি দেখলেই বাঙালি যেমন আবেগাপ্লুত হয়ে যায় আমার বেলাও এর কোনো ব্যাতিক্রম হলো না - পানি দেখলেই আমিও  কাব্বিক হয়ে যাই - অপরূপ এই পানির রূপ - ক্রিস্টালের মত স্বচ্ছ - পাচ ছয় ফুট গভীরতা সবুজ স্বচ্ছ বেশ ভালো গতিতে স্রোত বইছে পাতার দোলার প্রতিফলন - বড় বড় অনেক গুলো পাথরের প্রাকিতিক ঘাট - পিচ্ছিল একটু যদিও ; সব মিলিয়ে ভিশন একটা রোমান্টিক জায়গা - আর সাথে সঙ্গী বনরূপার অপরুপা - অপরাজিতা ফুলের মত প্রস্ফুটিত লুম্বিনি।  দশ বারো ফুট দুই পাশে দৈর্ঘ তারপরই ঘন আগাছার জঙ্গল ই ঢাকা - বাইরে থেকে দুই পাস থেকে চড়া দিয়ে হেটে বে নৌকা দিয়ে কেউ ঢুকতে পারবে না এই ঘাটে।  প্রাকিতিক কেমফ্লাজ - নিভৃতে সবার অগোচরে হারিয়ে যাওয়ার এক মোক্ষম জায়গা - যদিও ওই দিনের ই স্থানে অনেক কিছুই ইচ্ছে করলেই ভাবা যাচ্ছিল না - অস্ত্রের আনাগোনা  তার উপর আমি ওদের লোক না - আলট্রা জাতীয়তা বাদী রা সব সময়ই চোখ রাঙ্গাত যদি কোনো বাঙালি ছেলে ওদের কোনো মেয়ের সাথে কোনো প্রকার দহরম মহরম সম্পর্ক করার চেষ্টা করত ; যদিও আমার সাথে হয় নাই আর আমার তখন এইসব প্রেম প্রীতি ভালবাসা জাতীয় জিনিস নিয়ে ভাবার সময় ছিল না - ওটা সারু  ভাই সুমনা - প্রভা - কায়সার ও তুষার দা' আর অন্য রা করত - আমি   ব্যাস্ত থাকতাম বই পড়া  - আড্ডা মারা -শঙ্করের বিয়ে দেওয়া - ঘুরে  বেড়ানো - একটু আধটু খেলাধুলা নিয়ে।


একাকী নির্জন এই পারিপার্শিক প্রাকিতিক সুন্দর অভয় অরন্যে সান্নিধ পেতে মনটা জানি কেমন ব্যাকুল হয়ে উঠলো ; চুলের ফাক দিয়ে ওর দুধ আলতার সংমিশ্রনের মত গ্রীবা উকি মারছিল আর আমাকে কেমন যেন কাছে ডাকছিল ! সে এক অপূর্ব আবেগময় অনুভুতি - কেন যেন মনে হলো - লুম্বিনি ও এমন একটা কিছু চাচ্ছে আমার কাছ থেকে - কি চায় ও ?



আমি ক্লান্ততার অজুহাতে পাথরের উপর বসে পরলাম - বললাম প্লিজ একটু রেস্ট নেই।  জিগ্গেস করলাম তুমি কি গান গাও ?


প্লিজ গাওনা ওই গানটা ; যদি জানো ;


'' ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে। ...বহে কি বা মৃদু বায়। .......''


ও এসে আমার পাশে পাথরের উপর অবলিলিয়ায় বসে পড়ল ( বাঙালি কোনো মেয়ে কোনো দিন এতটা নিকটে সাত জন্মেও বসত না - বাজী ধরে বলতে পারি)


বলল, এই টা আমার খুব প্রিয় গান। .......


আমি বললাম তুমি গাইবে আর আমি শুনব এই দুপুর বেলা। ..প্লিজ গাও না !!




পাশে বসে গানটা গাইলো - পাহাড়ের গায়ে আছরে পরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো ওর গাওয়া গানের প্রতেকটি পংক্তি।... সুরের মূর্ছনা আর আবেগের আবেদন - নিস্তব্দ: চুতুর্দিক ; শুধু লুম্বিনির গলার শব্দে নিরবতাকে সুরে সুরে ভেঙ্গে দিল।
ছোট বেলা বাসার ছাদে জোসনা রাতে সবাই মাদুর বিছিয়ে বসতাম আর মা মাঝে মাঝে গাইতো তার প্রিয় গানের মেডলি। ভাবলাম পরীক্ষা শেষ - ২০ তারিখে চলে যাব মায়ের কাছে আর জোসনা রাতে আবার শুনবো। ..আজি জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তেরও মাতাল সমীরণে ;
কখন যে পাথরে হেলান দিয়ে শুয়ে পরেছিলাম নিজের অজান্তে নিজেই জানতে পারি নাই - হঠাত মৃদু একটা ঝাকুনিতে প্রকিতস্থ হলাম আর চোখ খুলে দেখি ওর মাথাটা আমার পেটে দিব্বি একটা বালিশের মত ব্যবহার হচ্ছি যেন , কিন্তু কেন যেন মনে হলো - অন্যরকম ; বেশ খোলামেলা ওরা আমাদের মত এত নকরা টকরা বা জড়তা বা শরমিন্দা না।
আস্তে আস্তে অবিন্স্থ চুল গুলোকে হাত দিয়ে গুছিয়ে দিলাম আর ভাবলাম - কথা জানতে হলে আমাকে ভালো অভিনেতা হতে হবে ; এটা কোনো দুরভ্সন্ধি মূলক ফন্দি নয় আমার - আমি সারা জীবন ই খুব অনুসন্ধানী ; প্রশ্নবোধক চিন্য সারাক্ষণ আমার মাথায় ঘুড়ে সদা সর্বদা। রাঙামাটি কলেজে ভর্তির পর থেকেই সারাক্ষণ আমার মাথায় ঘুর পাক খেত কেন এই সশস্ত্র আন্দোলন ? কি কারণ ? করা এরা ? কে এদের নেতা ? ৭১ এর মুক্তিদের মত করা এদের ইন্ডিয়া ? এর শেষ কোথায় ? পৃথিবীতে তখন কোল্ড ওয়ার, কমুনিস্ট আর পুজিবাদী ওয়ার্ল্ড এর মাঝে ছোট ছোট প্রজাতন্ত্র গুলোকে নিয়ে পিং পং খেলা চলছিল সেই ষাট দশকের প্রথম দিক থেকেই - কিন্তু এই সবের শেষ কোথায় ? কে দিচ্ছে এদের এই কঠোর জীবন যাপনের অনুপ্রেরণা ? এইসব প্রশ্ন আমাকে প্রতিদিন বেশ ভাবান্নিত করে তুলতো। আমি নিরপেক্ষ - আমার কোনো দলের সাথে হাত মিলানোর কোনো অভিপ্রায় নাই।
আমি জীবনেও আর কখনো চাইব আমার মত অন্য কেই তার ভাইজানকে হারাক এই প্রলয়ে ; আমি ৭১ হারিয়েছিলাম আমার বন্ধু, আমার একমাত্র শক্তি, আমার রক্ষাকারী, আমার উপদেষ্ঠা এবং আমার সহমর্মী আমাদের সবার প্রিয় ভাইজানকে। এর পর থেকে যুদ্ধ, গন্ডগোল, খুন খারাবি মনে প্রাণে ঘৃনা করতে শুরু করেছিলাম।
কিন্তু, কেন জানি মনে হতো - এরা কি অতি আবেগপ্রবণ হয়ে ওভার রিয়েক্ট করছে না তো ? তাই - যেহেতু , কোনো বই পুস্তক, মেগাজিনে কোথায় কেই লেখে না এদের নিয়ে - কোনো মানুষ ও একবার মুখ খুলে না এদের বিষয়ে - তখনি আমি উদ্যোগ নিলাম - আমাকে জানতেই হবে এদের এই ঘটনার সব ইতি বৃতান্ত , যার পথ ধরেই আমার এখানে আসা - মনে মনে আমি বেশ ভীত - কি হবে যদি আর্মি বা অন্য কোনো সরকারী বাহিনী যদি এদের কেম্প আক্রমন করে - এদের মাঝে আমাকে পায় যদি - কি হতে পারে আমার অবস্থা ? মৃত্যুও হতে পারে ? অনিবার্য - আবার শুনেছি অমানবিক অত্যাচার হতে পারে জিজ্ঞাসাবাদের নামে। তারপরও কেন জানি এটাও মনে হলো না কেই আমাকে কিছু বলবে না ; এক ধরনের সান্তনা দেওয়া নিজেকে ; অস্ত্রের কাছে সবাই সমান নিশানা।কেই মসুর আর কেউ শুধু নিশানা - আমি হয়তো বিবেচিত হব শেষের টা হিসেবে - আবার ভাবলাম ইত্তেফাক অথবা বিচিত্রায় প্রচ্ছদে আমার ছবি উঠতে পারে ? অনেক অসংলগ্ন ভাবনার মাঝে হারিয়ে গেলাম আর নিবিড়ে সিতি কাটতে থাকলাম ওর বেশ ঘন এবং অমসৃন শক্ত চুলে। পোষা বিড়ালের মত লুম্বিনি নিতে থাকলো আমার চুলে হাত বুলানো। নিছক তারুণ্য - স্নেহ আর একাকিত্বের উষ্ণ সানিধ্য - নিষ্পাপ এক বন্ধুত্ত বৈ কিছুই না।
ধীরে উঠে বসে প্রশ্ন করলাম - আচ্ছা, আমি কি কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি মাইন্ড করবে না তো আবার ? না ; উত্তরে বললো -
আমি বললাম - আচ্ছা মনে কর তোমারা স্বাধীন হয়ে গেলে তা হলে কি হবে তোমাদের রাজ্য এবং রাজার ?
বল্লো - কেনো আমদের রাজা থাকবে আমরা তার প্রজা থাকব এখনকার মত।
বললাম তাই ; আমি ইতিহাস সাবজেক্ট খুব ভালবাসি - রাজা, রাজবংশ, সাম্রাজ্য , আলেকজান্ডার ( সিকান্দার), জাপানের সম্রাট আকিহিত - হিরোহিত - মুঘল শাহেনশা এদের ইতিহাস পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। আমার খুব শখ প্রফেসার হবার ইতিহাসের প্রফেসর।
কিন্তু, তোমরা তো সবাই আমার কাছে মনে হয় এমেচার জাতীয় যুদ্ধা - রাষ্ট্র তো অনেক বিশাল এবং রাষ্ট্র অনেক ক্ষমতা রাখে - এত বড় একটা প্রতিষ্ঠিত ( এতটা গুছিয়ে তখন বলতে পারতাম না অব্যশই ) প্রতিষ্ঠান কে হার মানানো চাট্টি খানি কথা না।
বললাম আমি আগে উত্তর বঙ্গে ছিলাম ওখানে দেখেছিলাম অনেক জাসদের গণ বাহিনীর ছেলে পেলে রাতের বেলা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াত - চাদা চাইতো - চাদা না পেলে মানুষদের প্রকাশ্যে দিবালোকে বা রাতে এসে খুন করত - ওরাও বলতো ওরা মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছে - সামজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈগানিক সমাজতন্ত্র কায়েম করবে অথচ যেই মানুষকে ওরা মুক্তি দিবে ঐ মানুষকেই নির্ধিদায় খুন করতো যদি ঠিক মত চাদা না পেতো - আমার স্কুলের দু' একজন ওদের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে জীবন বরবাদ করে দিয়েছিল বালক আর যুবক হবার সন্দিক্ষণে।
তোমাদের ও আবার এই রকম অপমৃতু যা না হয় ? দেখো কিন্ত ? ঔ অল্প বয়েসেই বুঝতাম আরাম আয়েশ, প্রতিপত্তি, সমাজের শ্রেনিবিনাশ এইসব মানুষের পক্ষে ত্যাগ করে শ্রেণী বিহীন সমাজে বসবাস করা বড়ই কঠিন।
ওকে প্রশ্ন করলাম - তোমাদের এই সংগ্রাম তো শুধু গ্রাম ভিত্তিক মনে হয় পেটি বর্জুয়া শহরের বাসিন্দারা কি তোমাদের এই সংগ্রামে সম্পৃক্ত ? আমার কাছে তো তা মনে হয় না। হলেও হতে পারে কিন্ত আপাত: দৃষ্টিতে অন্যরকম লাগে।
মাথা নেড়ে আমার কথায় সায় দিল হা বোধক - বুজলাম সে এখন সাচ্ছন্দ বোধ করছে কথা বলতে ;
আমার মাথায় কয়েক লক্ষ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে - ভয়ে জিগ্গেস করছি না।
আবার ইচ্ছে করে ঘুরিয়ে দিলাম প্রশ্ন গুলো অন্য দিকে - তা - এই বলনা তুমি কেমন করে মিসনারী স্কুল এ পড়ে এই পথে কেন এলে ?
হঠাত একদম চুপ হয়ে গেল - অশ্রুসজল চোখ - গ্রীবা বেয়ে নেমে গেল এক দু ফোটা জল - প্রশ্ন করার ত্রিস সেকেন্ডের মধ্যে। একটু ঘাবড়ে গেলাম - বললাম - সরি, আমি বুঝতে পারি নাই - এটা যে এতটা সেন্সেতিভ।
খুব আস্তে আস্তে বললো - আমার কেই নাই - মিসনারী স্কুলে ওরা আমাকে বড় করেছে ২ মাস বয়েস থেকে - আমার পিতা মাতা দুই জনই জন্ডিস হয়ে দশদিনের ব্যবধানে পরলোকগমন করেছে ; তার পর থেকে আমি পাবলাখালী বনের ঐ পাশে - নিনসিরী মিসনারিতে বড় হয়েছি ; আমাকে মিসন থেকে বেলিজিয়াম এ পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু - ঘুরতে ঘুরতে একদিন এখানেই এসে গেলাম আজ থেকে প্রায় ১১ -১২ মাস আগে। .......
চলো উঠা যাক এখন - কালকে তোমাকে নিয়ে যাব নে দে ওদের মিসন এর ডাক্তায়জ্জা আসবে জুমে - তখন আমরা ওখানে যাবো জুমবাসী হিসেবে। ..........
উঠার সময় বললাম - বেলজিয়াম গেলেই তুমি ভালো করতে। ....... এই সব বিপ্লবের আইয়ু খুব কম - অল্পতেই জানটা দুঃক্ষ ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। এ জীবন বড় কঠিন আমি দশ দিনের বেশি এই রকমভাবে জীবন যাপন করতে নারাজ। ..........
বলতে বলতে পাথর থেকে উঠে দাড়িয়ে আরমরা ভেঙ্গে আবার উপরে উর্ধগামী যাত্রা শুরু করার পথে অগ্রসর হলাম দুজনে। খুব দুঃক্ষ লাগলো লুম্বিনির জন্য - ভাবলাম গৌতম বৌদ্ধ লুম্বিনি থেকে এসে এদের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বানিয়েছিল আমাগো কাজিন ( cousin) অতিষ দীপঙ্কর বাবু বিক্রমপুর থেকে এসে বীর দর্পে এদের কে বৌদ্ধ ধর্মের দীক্ষায় দীক্ষিত করে ছিল নাকি সেই ১০০০ খ্রিস্টাব্দে হয়তবা তিব্বত যাওয়ার আগে ? ...




"শান্তি বাহিনীর সাথে কয়েকটি দিন" - ১৩ 


অনেক  কষ্ট করে উঠে এলাম কেম্পের ওই টেবল এর মত পাহাড়টাতে, অনেক আগে একটা মাসুদ রানা বইতে পড়েছিলাম দক্ষিন আফ্রিকার কেপ টাউন এ একটা পাহাড় আছে পাহাড়ের উপরে চূড়া তা দেখতে মনে হয় যেন এটা একটা কোনো বাড়ির ড্রয়িং রুমের সেন্টার টেবলের মত ; কেম্পের ওই পাহাড়টা কেন যেন আমাকে ওই কেপ টাউন এর সেই ঐতিহাসিক পাহাড়ের কথা মনে করিয়ে দিল বারবার। 
হঠাত আকাশ তা একদম পরিষ্কার গারো ঘন নীল্ আকাশ আর দিগন্তে দেখতে পেলাম উচু পাহাড়ের সারি আর সারি আর ঐসব সারি সারি পাহাড়ের মাঝে মাঝে আবছা আবছা ঘরের মত আকৃতির ছবি। 

আমার জানা ছিল না ইটা আবার কোন শহর - উপরে উঠেই পশ্চাদপদে কর্ণফুলী নদীর শিন্গ্ধ মসৃন জাতীয় এক ধরনের ঢেউ খেলিয়ে হারিয়ে গেল লুম্বিনি - কোন বিদায় না নিয়েই। 

দুরে জনি সহ আরো কয়েক জন দাড়িয়ে ক্লাস জাতীয় কিছু একটা নিচ্ছিল মনে হলো - আমি এগিয়ে যেয়ে হ্যালো বলে চলে গেলাম  আমার রুমে - বেশ কেমন যেন একাকী  একাকী অনুভূত হলো নিজেকে। 

তাকিয়ে দেখি এক কার্টুন ইন্ডিয়া কিং সিগারেট আমার বেডের উপর - আর কোন কথা নাই - একটা আগুন ধরিয়ে দিলাম কষে একটা সুখ টান। ...... লুম্বিনির ডাকে প্রকিতস্থ হলাম ও বলল খানি রেডি - আহা আমার প্রিয় চুমোট হোরা গুরুং আর ওদের জুমের উত্পাদিত আঠা আঠা চাউল - চার পাচটা বাসের চোঙ্গার চুমোট হোরা দিয়ে ভরপেট ভাত খেয়ে ফেললাম অবলীলায় বেমালুম জনি  আসার আগেই।  আমি এমনিতেই সারা জীবন একটু পেটুক এবং ভোজন  বিলাসী।  বড় এক গ্লাস জু' দিয়ে ঢেকুর তুলে সব ওয়াস ডাউন করে ফেললাম ছোট জলদি - ইন্ডিয়া কিং এর নেশায় আমি তখন মগগ্ন। 

সন্ধা বেলা আমি আর জনি ঘরে ঘরে বসে বসে গল্প করলাম ঘন্টার পর ঘন্টা - আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়লো সারা রাত - অনেক কথা বললাম - ওদের রাজনৈতিক মতাদর্শ আমার কাছে বেশ জটিল মনে হলো - কয়েক দিন আগে থাইল্যান্ড এ সামরিক অভ্ভুত্থান হলো ইত্তেফাক আর বিচিত্র বড় বড় হেড লাইন নিউজ করেছিল - অনেক কিছু জেনে ছিলাম তখন ঐ দেশ সম্পর্কে - অল্প বয়েসে যা বুঝেছিলাম তা হলো তিন শুলানন্দ প্রধান মন্ত্রী কিন্তু সে তাদের দেশের তিনস বছর পুরাতন রাজ বংশের মদদপুস্ট - এদের মতদর্স কেমন যেন একই ধরনের মনে হলো।  মনে মনে ভাবলাম বাঙালিদের মত  এরা মোটেও না - বাঙালিরা রাজা বাদশা - জমিদার - তালুকদার - জোতদার দের কে মনে প্রাণে ঘৃনা করে এবং কোন রাজা বা বাদশা বা মোঘল সম্রাট কে গদিতে অধিষ্ঠিত করার জন্য বাঙালি কোনদিন প্রস্তুত নয়। 


তাহলে কেন এই বিপ্লব - আর চায় না গনত্রন্ত - মিজোরামের গেরিলা দল মিজোরাম নেশনাল ফ্রন্ট এদের বন্ধু সংগঠন  - অনেক বছর আগে বাবার মুখে শুনেছিয়াম রামগর - কাসালং  ফায়ারিং  ১৯৬২  সালে এর পর ইপিআর এর লোকরা পাকিস্তান আমলে ঐসব গেরিলাদের অস্ত্র - গোলাবারুদ - ট্রেনিং ও দিত সেই পাকিস্তান আমলে যখন রামগর আসা মানে এক বিরাট মহা জার্নি করতে হতো - সাজেক ( রামগর )বা মদক (বান্দরবন) ঐসব বিওপি যাওয়া মানে জীবনের বারোটা বেজে যেত এতই বন্ধূর ছিল পথ। 
হঠাত জিগ্গেস করলাম আমার এখন কোন দেশে ? উত্তরে কিছু না বলে শুধু হাসলো আর এক ঢোকে দো চো আনিপুরা গ্লাস টা  শেষ করলো - আমি বেকুবের মত ভেবাচেকা হয়ে দেখলাম ওর অমৃত সুধা পানের কাজ কারবার।  আমি একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা মানুষ আমার দ্বারা এই পানীয় পান করা শোভনীয় কি না এই ভাবতে ভাবতে  

বললাম দোস্ত - তোমাদের এই বিপ্লবের ফসল - অনেক বিলম্বিত প্রয়াস - আর  কটা  দিন সবুর করো রসুন বুনেছি হয়ে যাবে - লোকজন আশান্নিত হয়ে আসবে কিন্তু দীর্ঘ সময়ের এই রসুনের অপ্পেখার আগেই কেটে পড়বে - তুই নিজেই এত দিন রসুনের জন্য অপ্পেখা করবি বলে আমার মনে হয় না -  

কেন যেন মনে হলো ও আরও অনেক কিছু বলতে ইচ্ছুক কিন্তু অমৃত সুধা ওকে গানের ভুবনে ক্রমান্নয়ে নিয়ে  যাচ্ছে  ; আস্থে আস্তে বেশ সুর করে গাইতে লাগলো 

এক দিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে। ..ফিরবে না সে তো আর কারো আশাতে। ..............


আমি নিস্তব্ধ হয়ে গান শুনতে শুনতে কখন যে নিজেই নেশাগ্রস্থ  হয়ে গিয়েছিলাম তা আর বুজতেই পারলাম না। 

গুন গুন করে বললাম 

মেয়  নজর সে পি রাহা  থা। ...এ ইয়ে শামা বদল  না জায়ে। ........


ভীষণ বিকট চিল্লা চিল্লি তে ঘুম ভেঙ্গে গেল - উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি - কেম্পে অনেক নতুন মুখ সব ট্রেনিং করছে - জুডো - কারাতে - বেয়নেট ফাইটিং অনেক গুলো ছোট্ট ছোট্ট দল - মেয়েরাও আছে সবাই প্রশিক্ষণ নিয়ে মশগুল। 
এই প্রথম এত গুলো শান্তি বাহিনী এক সাথে দেখতে পেলাম - চেহারা গুলো কঠিন জাতীয় তেমন মনে হলো না ; অননিচ্ছা করছে কসরৎ কেন জানি মনে হলো 
গুনবার চেষ্টা করলাম - তার পর কেন জানি ভাবলাম দূর ফালাও - ওদের কে গুনে আমার লাভ টাই বা কি? কোনো রকম চা নাস্তা নেই আজ আমার - প্রাত্যহিক কাজ কর্ম সেরে রুমেই শুয়ে শুয়ে বই পরলাম আর ওদের কসরৎ দেখলাম ; তার পর শুরু হলো ক্লাস - বেশ বড় ক্লাস দুইটা হলো দুই দিকে - কেউ যেহেতু ডাকছে না তাই আর রুম থেকে না বেরিয়ে ওখানেই শুয়ে শুয়ে শুনছিলাম ওদের ক্লাস এর বিষয় গুলো। 
কেন জানি মনে হলো- আমি মনে হয় আমার দেশের ভৌগলিক সীমানার ভিতরে নেই - একটু ভয়ও লাগলো আবার ভাবলাম কাম হোয়াট মে ,,,, জীবনে সকল সময়ই এই ধরনের মেভেরিক একটা ভাবাপন্ন ছিলাম সব সময়।মনে হলো আমি যেখানে শুয়ে আছি এটা মনি হয় শান্তি বাহিনীর প্রধান কিম্বা অন্যতম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ; তা না হলে এদের আর তো কোনো গতিবিধি অবলোকন করলাম না এই কয় দিন যাবত। 
পাশের যে ক্লাস ওটা তে শুনছিলাম প্রশিক্ষক আমাদের দেশের আর্মি - এবং অন্যান্য সব বাহিনীর সম্পর্কে কথা বলছে - অনেক ভুল এবং মনগড়া ওদের ভাস্য তা মনে হলো আরো বুঝলাম ওদের কাছে সংবাদ প্রবাহিত হয় বা হচ্ছে অনে কম - আমাদের সেনা বাহিনীর সম্পর্কে ধারণা অনেক অপ্রতুল যদিও আমি নিজেও জানিনা একদম কিন্তু ওদের কে যা বলছিল তা কেন জানি সঠিক মনে হলো না ;
গ্রীন ড্রেস পরা সবাই - পুরা পুরি ইউনিফর্ম পরা - যদিও ওদের কে বেখাপ্পা এবং কেন যেন বেমানান লাগছিল ; তথাপিও একটু অবাক লাগলো। 
হুইসেল মেরে বিরতি হলো - বেলা অনেক আগেই দিপ্রহর হয়ে গেছে - ভীষণ ভেপসা জাতীয় হিউমিড গরম লাগছিল - তারপর ক্ষুদা - ঘুমিয়ে পরলাম আবার - অকেজো মনে হতে লাগছিল নিজেকে - অলসতা একটা বেধী - মানসিক ভাবে আমি প্রচন্ড ভাবে বেস্ত জানার আগ্রহ এবং গেরিলা যবন - চে' গুভারা হওয়া এবং সেই আন্দেজ পর্বত মালায় গুহায় রাত কাটানোর স্পৃহা এই সব আমাকে ধাবিত করছিল প্রচন্ড। তাই সব কিছু মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম এন্ড অবলোকন করছিলাম পুন্গ্খান্পুন্খ ভাবে অধীর আগ্রহে।
১৯৭১ সালে গেরিলা হওয়ার খুব সখ ছিল কিন্তু হতে পারি নাই - জীবনেও আর ঐ সুযোগ আসার কোনো সম্ভবনাও আছে বল মনে হল না। কিন্তু এখন তো আমাদেরকে কেই শোষণ করছে না। 
বেশ কয়েক মাস আগে আমার এক ক্লাস মেট পান্নার ( আমাদের ক্লাসের আদু ভাই ছিল ও ৭ না আট বছরের বড় - ব্রেক অফ স্টাডি ) সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম রিজার্ভ বাজারের কাছে ওই কাঠের তৈরী সিনেমা হলে - এক রবি বারে মেটেনি শো দেখতে - ছবিটার নাম আজ অত বছর পরেও স্পস্ট মনে আছে '' এডমিরাল ইআমা মো টো '- একজন এডমিরাল যে নাকি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে লড়েছিল - সিনেমার কাপ্সনে তাই লেখা ছিল - মনে হলো এরাও কি আবার ঐ এডমিরাল এর মত লড়ছে না তো ? 
ওই সিনেমাটা আরেক তা গুরুত্ব পূর্ণ ছিল এই কারণে - যে , তখন আবার আমাদেরকে বাবাদের চাকরির বদৌলতে সিনেমা হলে বক্স বসে সিনেমা দেখা ফ্রি ছিল- স্কুলের ফুল ফ্রি স্টুডেন্ট সীপ বৃতির মত কিন্তু সিনেমা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর গেট ম্যান বলল আমাদের কে পাশের ছোট কেবিন বক্স চলে যাবার অনুরোধ করলো কারণ দুই জন আর্মি কর্মকর্তা এসেছেন ছবি দেখতে - পান্না এক জন কে চিন তো এবং হাফ টাইম এর সময় অনেক ক্ষণ অনার সাথে কথাও বলল্লো - তার দিন পনের পান্না একদিন আমাকে কেন্টিনের পিছনে সিগারেট খেতে খেতে বললো যে ঐ আর্মি মেজর যার সাথে ও কথা বলেছিল উনি মেজর মহসিন রাজা - উনি শান্তি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। পান্নাকে আমার সব সময় সন্দেহ হত ঐ বেটা এই বুড়া বয়েসে আবার আই এস সি পড়তে আসবে কেন এবং ঐ দিন সিনেমা হলে ওর কথা বার্তা বলার ভঙ্গি টা আমার সন্দেহটা আরো ঘনীভূত করেছিল - তারপর কেয়ক মাস পর পান্না মিয়া
গায়েব ; আর জীবনেও ওকে দেখিনাই কোনো দিন - কেন জানি ও আমি এবং আশীষ এর সাথে খুব বন্ধুত্ব করতে চাইতো। আশিস এর বাবা ডি আই - ১ ছিল বলে কিনা জানিনা ; ছাত্র কিন্তু টাকা উড়াত মুড়ির মত আমাদের কেও দেদারছে টাকা দিত সময় অসময়ে। 
এইসব ভাবছিলাম আর পেটের ক্ষুদা নিবারণের চেষ্টা করছিলাম সিগারেট টেনে ; বেলা প্রায় দুটো দুই দিন পর ওদের বিজু উত্সব - সবাই কেমন যেন ফুর্তি ফুর্তি ভাব - কিন্তু কোথায় আমার উদাসিনী লুম্বিনি- এক্কাকিত্তের নিষ্পেষণে আমি ওর আত্মগোপন বেশ কষ্টকর - কেন জানি ভাবতে লাগলাম - জনি কেও দেখতে পাচ্ছি না কোথাও ; 
ক্লাস শেষ সবাই ঢুকে গেছে রুমে লাইন ধরে সব গুলো নেমে যাচ্ছে পানির দিকে আর হইতো দুপুরের খাবার খাবে ; 
বছর দুয়েক আগে খুব সা'ণ সৌকতে রাজা দেবাশিস রায়ের রাজা হিসবে অধিষ্ঠিত হওয়ার ইনভেস্টিটিয়ার সিরিমনি হলো - জেনারেল জিয়া - জেনারেল মঞ্জুর - এবং পুরা জেলা হৈ হৈ রই রই কান্ড হয়ে গেল - বিরাট বংশীয় তরবারী উপহার এবং ভানতে এবং ভিক্ষুরা শপথ গ্রহণ পরিচালনা করলো - রাজ বাড়ি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল সেই দিন - বিরাট আয়জন - বিশাল এক রাজকীয় অনুষ্ঠান - পম্প এবং সিরিমনি - ব্যান্ড পার্টি - ফুলেল শুভেচ্ছা আবার অন্য দিকে ঐ রাজার প্রজাদের সাথে চলছে মল্ল যুদ্ধ - রাজার প্রাজাদের বিপক্ষের বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পড়িয়ে দিল আবার রাজার মাথায় মুকুট - বয়েস অল্প তবে এত বোকা মনে হয় ছিলাম না কখনো ; 
আজ মনে আছে সেই দিনটার কথা - সারাদিন কি না বৃষ্টি তার পরও মানুষের ঢল - হেটে , বাসে , বেবিটেক্সি , মোটর সাইকেল নৌকায় লক্ষ্য মানুষের ভীর - বুঝলাম এদের রাজা এদের কত প্রিয় ; 
রাজার বাবা পলাতক ৭১ এর পাকিবাহিনীর দোসর - অথচ তার ছেলে আবার ঘোষিত হলো রাজা - ৭ বছর যাবত রাজ্য রাজাবিহীন ইতি মধ্যে রাজার প্রজারা বিদ্রোহ করে বসে আছে ! অঙ্ক যেন কোথায় মিলে না। 
রাজনীতি জিনিস টা সারাজীবন আমাকে বেশ দোলা দেয় - কিন্তু রাজনীতি করার কোনো স্পৃহা জাগলো না কখনো। এদের এই যুদ্ধ আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুললো - রাজনীতির এই মারপেচ আমার বোধগম্য হতে চাইল না কেন জানি ;
রাজা পাকিস্তানের ভুট্টোর খাস দোস্ত - উজিরে খামোখা ( মিনিস্টার দপ্তরবিহীন - আজীবন) - আবার ভারতের ছত্র ছায়ায় তারই অনুগত প্রজারা সহায়তা নিচ্ছে ( আলেজেদলী ) - আবার ভারত থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী মিজোরাম গেরিলারাও আবার এদের বন্ধু - মিললো না কোনো অঙ্ক !
কার যুদ্ধ কে করছে - দিক নির্দেশনা ভুল নাকি আমাদের অঙ্ক মিলানোতে ভুল ? 
নাকি আমরা উদর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছি ? ওদের আচরণ কিন্তু ভয়ঙ্কর - যদিও আমাকে অনেক আপ্পায়ন করছে তথাপিও আমার বুঝতে বাকি থাকে নাই ওরা যে কত কঠোর। 
সুশৃঙ্খল ওরা নির্ধিধায় বলতে হবে - কিন্তু এত বড় রাষ্ট্র তদুপরি সামরিক শাসিত রাষ্ট্র - এর সাথে ওরা কোনদিনও কামিয়াব হবে না - আর ওরা অনেক বেক ডেটএড ; 




ভাবলাম ওরা তো জানে আমার সম্পর্কে আবার না আমাকে কেই রাঙামাটিতে ধরিয়ে না দেয় - এইসব ভয় আমাকে একটু বিচ্ছিন্ন করে তুলল - ফিরে আসার একটা তাড়া অনুভব করলাম নিজের অজান্তে। ........
ভাবলাম বিজু হয়ে গেলেই কেটে পরব। ....কিন্তু লুম্বিনি কে ফেলে কেমনে যাই ????? একাকী ???



শান্তি বাহিনীর সাথে কয়েক দিন - ১৬

মনে মনে আজ ভাবলাম ওই সকল নতুন এবং পুরাতন যতগুলো যুবক এই কেম্পে আছে ওদের সবার সাথে পরিচিত হব আর আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে বলব লুম্বিনিকে ;

রুমে এসে হাজির জনি সাথে আরো কয়েক জন - এদের সবাই কে পরিচয় করিয়ে দিল আমার সাথে - একজন আমাকে দেখে একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেল মনে হোল - কারণ ওকে আমি প্রায়ই দেখতাম পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের কাছে সংকরদের বাসায় - আমি ওকে বেমালুম না চেনার ভান করলাম ; ও এমন একটা ভাব দেখালো যেন আমাকে ও মোটেও চিনে না।

বগুড়ার এক জাসদ নেতার বড় ভাই উনি ইন্ এস আই এর একজন হোমরা চোমরা জাতীয় কর্মকর্তা থাকতেন সংকরদের বাসায় - ওনার সাথে আড্ডা এবং গল্প করতে দেখেছিলাম এই লোকটাকে কয়েক বার বিকেল কিম্বা রাতে।

বুঝতে বাকি রইলো না ; সারাজীবন দেখেছি বাবার বিভিন্ন বর্ডার থেকে আসা সোর্স দের - নিভৃতে এসে সব খবরাখবর দিয়ে যেত - সিলেট অঞ্চলে ওরা বলত বুন্গা খবর দাতা ওরা। আমরা ওদের কে নিয়ে প্রচুর হাসা হাসি করতাম - ওই বয়েসে মনে হয় সব কিছুর মাঝেই হাসির উপাদান খুঁজে পেতাম। জীবন তখন কত নির্মল ছিল আর আজ যুবক হয়েই মাথায় চিন্তা কি করব জীবনে - বাবা মা'রা তো ডাক্তার - ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ছাড়া অন্য কিছু হতেই দিতে চায় না ; বাবাকে একবার বললাম আমি ইতিহাস নিয়ে পড়ব আর বড় হলে একজন প্রফেসর জাতীয় একটা কিছু হব - ওরে বাবা যা না বলা আর সঙ্গে সঙ্গে এক টন ওজনের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলাম আর বলল সায়েন্স ছাড়া আর কোনো সাবজেক্ট পড়লে নাকি কপালে ভাত জুটবে না ; আমাদের সমাজে ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের সবচে' বড় জীবন বীমা ( লাইফ ইন্সুওরেনস ) খারাপ না কিন্তু তথাপিও ওনারা সব বিষয়ে নাক গলান বেশি - এই মনে হয় আমাদের সমাজের পেট্রিয়াক ব্যবস্তা। অগত্তা উপায়অন্তর না পেয়ে বললাম একদিন আমি তো সেই ছোট বেলায় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফোর বেঙ্গল এর অকুতোভয় সৈন্যদের দেখেই প্রতিগ্গা করেছিলাম আমি যখন বড় হব তখন ওদের নেতা মেজর খালেদ মোশাররফ আর মত অফিসার হব ; তার পর সেই যুদ্ধ - সেই আমি মেজর জিয়া বলছি শুনে শুনে ভাবলাম আমাকেও একদিন ওনাদের মত কিছু একটা হতে হবে ; শুনে বাবা বলল পরীক্ষা দিয়ে দেখো চান্স পাও কিনা দেখো - উত্তরে বলেছিলাম পরীক্ষা এই সব আমার জন্য পান্তা ভাত - চোখ বুজে পাস করব আপনি কোনো চিন্তায় করবেন না;


অজানাকে জানার স্পৃহা আমার ভীষণ - তাই তো এত বড় রিস্ক নিয়ে এখানে আসা। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম আমি এই চার দিনে খুব বেশী কিছু জানতে পারলাম না বোধ হয়, পর্যাপ্ত কিছুই জানতে পারলাম না মনে হলো। কিন্ত কেন জনি আমাকে নিয়ে আসার সাহস পেল ? অনেক কৃতজ্ঞ মনে হলো - ভাবলাম ঢাকা বা দিনাজপুর বা চুয়াডাঙ্গা গেলে সেই পুরানো আড্ডা- সেই সিনেমা দেখা ( আমি সারাজীবন সব ধরনের সিনেমা - সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে খুব পছন্দ করি ) - সেই চা খাওয়া আর দল বেধে ঘুড়ে বেড়ানো - স্পুটনিক ক্লাবে বসে বসে ঘন্টা সায়েন্স নিয়ে তর্ক করা ঐসব না করে এখানে এসে জীবনের একটা ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। কি ভাবে মানুষ মানেবেতর যাবন করে সইচ্ছায় - বিপ্লবের সুধা পান করে কিভাবে যুবকরা, জীবন বিপন্ন করতে রাজি হয়, কেন এত জাতীয়তা বোধ এবং কেনই বা এইসব যুবক - যুবতীরা জনযুদ্ধের নাম জীবন বিসর্জন দিতে আগ্রহী। মনস্তত্ব একটা বিরাট বিজ্ঞান ; ওদের মানসিক উপাদান গুলো কি আমাদের থেকে ভিন্ন ? ওদের জীবন বেবস্তা আমাদের চেয়ে ১৮০ ডিগ্রী উল্টা - খোলামেলা - যুবক যুবতী ফ্রি মিক্সিং - হাতে হাত ধরে কথা যাই ওদের হারিয়ে আর আমরা এখনো সেই আব্বাজানের মুখাপেক্ষী বিয়ে এবং জীবন যাপনের কৃপার নিকট সন্নিবেশিত হয়েই আছি - এরা সাংস্কৃতিক ভাবে ও অনেক এডভান্স - বেশ সৃজনশীল - কিন্ত কেন এরা উপ জাতি ? উপ জাতি আর জাতির ভিতর পার্থক্য কি? এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রুম থেকে বের হয়ে ওদের ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলাম তা নিজেই বুঝতে পারলাম না। একটা বিশাল রুম কম করে হলেও বিশটা বিছানা পাতা - লাইন ধরে মেঝেতে বিছানো - ঠান্ডা - ভিজা ভিজা একটা গন্ধ আর বিড়ি আর সিগারেটের দুর্গন্ধ;

দূর থেকে আমাকে দেখে উঠে আসল একজন দীপঙ্কর অর নাম পরিচয় দিল - বললো আমি তোমাকে দেখছি অনেক বার জনির হোস্টেলে রাঙামাটি তে ;অর হ্যালো বলে ওর দেখানো একটা বিছানায় বসে পরলাম - ও সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ওদের ভাষায় - যে আমি জনির প্রিয় একজন বন্ধু - দীপঙ্কর ও আমাকে চেনে অনেক দিন যাবত ইত্যাদি প্রভিতি। অনেক কথা বললাম কিন্তু সবাইকেই মনে হলো


অযো পাড়াগায়ের লোকজন - শহরের ওরা আমাদের চেয়ে অনেক স্মার্ট এরা একেবারেই ধূর জাতীয় গোবেচারা গোছের - ; একটু মনোক্ষুন্ন হলাম যদিও কারণ এরা আমার কাপ অফ টি না তাই ভেবে। কথা বার্তা বড়ই কঠিন ওদের সাথে করা - অর্ধেক কথাই আমার ওরা বুঝে না। কঠিন সমস্যা। কোনো কথায় বের করতে পারলাম না ওদের থেকে - ভাবলাম দীপঙ্কর এর সাথে দোস্তী জমিয়ে ফেলবো শীগ্রই - অর মাঝে অনেক সম্ভাবনা আছে বুঝতে পারলাম এবং ও মনে হয় চায় বন্ধুত্ব করতে।

চোখ দুটো খুঁজে বেড়াচ্ছে শুধু একজন কে - দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া যেন সে - এই কর্কশ মুখ গুলোর মাঝে ঐ যেন একমাত্র হাস্সৌজ্জল নক্ষত্র - লুম্বিনি !!

দীপঙ্কর চা নিয়ে এলো - দারুন ভাবে কিতার্থ হলাম ওর আপ্পায়নে ; জিগ্গেস ই করে ফেললাম লুম্বিনি কডে ? বলতে পারবে ? উত্তরে বললো ওরা সব মেয়েরা মিলে বিজু'র জন্য তৈরী হচ্ছে - দীপঙ্কর পাশেই আর বসলো - বয়েস ১৫ থেকে ১৬ হবে - ছোট খাটো একজন পেটানো শরীরের যুবক বেশ বন্ধুভাবাপন্ন - খুব স্বস্তি বোধ করলাম - ও বললো ও কাপ্তাই ইস্কুলে পড়ে মেট্রিক দেবে আগামী বছর ; মেডিকেল এ পড়তে ইচ্ছুক। মুখে এসেও উচ্চারণ করতে বিরত থাকলাম - তুমি এখানে কেন - করতে যেয়েও করলাম না। খুবই ভদ্র ও মার্জিত দীপঙ্কর। খুব ভালো লাগলো ওকে - বললাম তোমাকে তো এই কয়দিন দেখি নাই ক কাপ্তাই বাধ বে এসেছ - বলল কাল রাতে আবার বিজুর পরদিন চলে যাব। আমি বল্ললাম আমিও মনে হয় চলে যাব তোমার সাথে - এই ধরনের একাকী হুল্লা গুল্লা ছাড়া জীবন আমার পক্ষে যাপন করা সম্ভব না ; আমি শহরে মানুষ - রাতে বড় লাইট না হলে আমি বিষন্ন হয়ে যাই ; জীবনেও দুই তিন দিনের বেশি গ্রামে থাকি নাই - রাত গুলো আমার কাছে এখানে খুবই বেদনাদায়ক। কুপি বাতি আর হেরিকলের আলো আমার আলোর চাহিদা মেটাতে পারে না ; আমি বললাম আমি রাতের বেলার কাপ্তাই বাধের আলোকিত নিয়ন বাতি আরে বড় বড় প্রসস্থ রাস্তা আর ওগুলোর আলোকসজ্জা দেখতে খুব ভালবাসি - বেচারা আমাকে ওদের বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ ও সাথে সাথে দিয়ে দিল - ভালই লাগলো ওর সাহচর্জ। বললাম চলো - আমার খুব খিদে পেয়েছে - কিছু একটা খাওয়া দরকার। জনি তো কোনো খোজ রাখে না। পেতে আমার খিদে পেলে মাথা আমার কাজ করে না।


কথার ফাকে ভাবলাম - আমাদের যেমন সৈনিক সব গ্রামের ঠিক তেমনি এদেরও পদাতিক সৈন্যরা গ্রামীন সম্প্রদায়ের। খুব একটা বেতিক্রম নাই। কিন্তু এইসব লোকরা কিভাবে এই বিশাল কার্য সমাধা করবে ; মোটেও অনুপ্রেরণা পাবার মত এমন কিছু না এরা এটা বোধগম্য হতে বেগ পেতে হলনা। অথচ শহরের যুবক শ্রেণী ভীষণ স্মার্ট এমনকি অনেকে আমাদের বাঙালি যুবকদের চেয়ে অনেক গুনে স্মার্ট। ওদের কে দেখে শহরে ভাবতাম আর কি আদৌ শান্তি বাহিনীতে যোগদান করছে কিনা ? এখানে এসে দিব্যলোকের মত পরিষ্কার।

বুর্জওয়া বা পেটি বর্জুয়া পুজিপতি সমাজের মানুষ রা সব দেশেই একই শ্রেণী চরিত্র বৈশিষ্ট বহন করে থাকে - রুশ বিপ্লবেও প্রলেতারিয়াত্রাই লেনিনের প্রধান জনবল ছিলো - মাও সে তুং ও একই ভাবে সমাজের ঐ শ্রেনীর লোকবল দিয়ে কমুনিস্ট রেড চায়না বানিয়েছিল - ফিদেল ও গুভারা'র বিপ্লবে ও হাভানার পুজিপতি সমাজ যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত কেসিনো, বারে, নর্তকীর নাচের মুর্ছনায় প্রমোদে ঢালিয়া দিয়ে ছিলো।


এই বিপ্লব তো আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লব নয় এই বিপ্লব আমার কাছে মনে হয়েছে করদ রাজ্য থেকে মুক্তি নিয়ে এক নতুন রাজা শাসিত রাজ্য ব্যবস্থা কায়েম করার যুদ্ধ। তা হলে ও প্রজাকুলের একটা বিরাট জনগোষ্টি এই সমান্তরালে অবস্থান করছে বলে মনে হলো না। কিন্ত পক্ষান্তরে যুদ্ধের দামামা আর সরকারী প্রস্তুতি তো বিশাল এবং স্থায়ী আচরণের। নি জার্ক (knee jerk) জাতীয় কোন প্রতিক্রিয়া না তো আবার ? থাক আবার ভাবনা আর চিন্তা - ক্ষিদায় পৃথিবী এখন গদ্যময়। ভাত দে মা - মানচিত্র খাবার মত আমার অবস্থা তখন।




ইমরান চৌধুরী 




চলবে। ....... অসামপ্ত 






  • This is a work of fiction. Names, characters, businesses, places, events, locales, and incidents are either the products of the author’s imagination or used in a fictitious manner. Any resemblance to actual persons, living or dead, or actual events is purely coincidental.

Comments